ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা গত ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বেলা ১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে ১টা পর্যন্ত। পরীক্ষায় অংশ নিতে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসেন প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন। তিনি হাঁটতে পারেন না, দুই হাত দিয়েও কোনো কিছু করতে পারেন না, মুখ দিয়েও স্পষ্ট কথা বলতে পারেন না এবং উচ্চতায়ও অস্বাভাবিক। তবুও স্বপ্ন পূরণে অদম্য তিনি। তার স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অবহেলিত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করা।
রিফাতের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এসেছেন বন্ধু রিফাত আদনান। বন্ধুর এমন ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকে। অনেকে বলছেন প্রযুক্তির এই যুগে বন্ধুত্বের এমন ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রতিবন্ধী রিফাত হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ফাহিদুর রহমানের ছোট ছেলে। নিজ গ্রামের নিউ মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ ৪.৬৩ এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। প্রতিবন্ধী হলেও স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা রিফাতের। হাঁটতে পারেন না, দুই হাত দিয়েও কাজ করতে পারেন না, চলেন হুইল চেয়ারে। তবে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এসেছেন ভর্তি পরীক্ষা দিতে।প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেকের সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তবে এগুলো অতিক্রম করে লক্ষ্যপানে অটুট ছিলাম। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। তবে কষ্ট ছাড়া তো কিছু অর্জন করা যায় না। আমার অর্জনে পরিবার এবং বন্ধুদের সহযোগিতা কখনো ভুলব না। রিফাত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৬৬ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। গুচ্ছের পছন্দক্রম দিয়ে সুযোগ পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেব। রিফাত বলেন, জীবনে ভালো কিছু করতে চাই। আমার স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ১৪৪তম হয়েছি। আইন বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা। ইবিতে ভর্তি পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আশা করি গুচ্ছতেও ভর্তির সুযোগ পাব। হুইল চেয়ারে করে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বন্ধু রিফাত আদনান বলেন, সামনে আমার কৃষি গুচ্ছ ভর্তি, পরীক্ষা তবুও এসেছি। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ওর সাফল্য ছুঁতে নেশা ওর। আমরাও সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। রিফাতের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া ভর্তিচ্ছু রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা সুস্থ-স্বাভাবিক থেকেও অনেক সময় যা করতে পারি না, রিফাত তা করে দেখিয়ে দিচ্ছে। ওকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। ওর স্বপ্ন পূরণ হোক এটা প্রত্যাশা করি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কোনো বাধা নয়; এটি রিফাত প্রমাণ করেছে। রিফাতের বাবা বলেন, ‘আমার সন্তান শারীরিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত হলেও প্রচ- মেধাবী। আমি বিশ্বাস করি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পেলে একদিন ভালো কিছু করবে। সবার কাছে ওর জন্য দোয়া চাই।’