হিমালয়ের মেরা পিকের চূড়ায় আরোহণ করেছেন বাংলাদেশি তরুণ জাফর সাদেক। ৬ হাজার ৪৭৬ মিটার (২১, ২৪৭ ফুট) উচ্চতার মেরা পিক জয়ে সাফল্যের হার খুব কম। এই পিকের চূড়া থেকে এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, মাকালু ও চো ইয়ো পর্বত দেখা যায়। পেশায় ব্যাংকার কিশোরগঞ্জের যুবক জাফর সাদেক গত ৩০ অক্টোবর এই সফলতা পেয়েছেন। এতে দারুণ উচ্ছ্বসিত তিনি।
পর্বতারোহী জাফর সাদেক বলেন, ‘মাউন্ট এভারেস্টের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত নেপালের লুকলা থেকে ২২ অক্টোবর সকালে ট্রেকিং শুরু করে সাত দিন পর মেরা পর্বতশৃঙ্গের বেস-ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত খাড়ে নামক একটা জায়গায় পৌঁছে সামিট পুশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ২৯ অক্টোবর সকালে মেরা পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের উদ্দেশ্যে খাড়ে থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে হাই ক্যাম্পে (যার উচ্চতা ৫৮০০ মিটার) পৌঁছে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিই। এরপর রাত ২টা ৩৫ মিনিটে হাই ক্যাম্প থেকে সামিট পুশে বের হই। বাইরে তখন তীব্র বেগে বাতাস বইছে। বাতাসের তীব্রতায় বরফের কণা উড়ে এসে চোখে-মুখে আঘাত হানছে। আমি আত্মরক্ষার্থে বরফে আইসএক্স গেঁথে তার ওপর দুই হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘ভোরের আলোয় যখন চারপাশ আলোকিত হলো তখন ধবধবে বরফের পর্বতে সকালের স্নিগ্ধ আলো প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছিল। চোখের সামনে মাউন্ট এভারেস্ট, লুৎসে, মাকালু, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চো ইয়ো, আমাদাবলামসহ অসংখ্য পর্বতের চূড়া রক্তবর্ণের হয়ে গেল। এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে লাল- সবুজের পতাকা হাতে আমি দুর্গম মেরা পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার এমন সুযোগ মানুষের জীবনে বারবার আসে না। সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে মেরা পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করি।’
কিশোরগঞ্জের সন্তান জাফর সাদেক বলেন, ‘এই পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের জন্য অনেক কঠিনতম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নেপাল এবং ভারতের পাহাড়ে বেশকিছু ট্রেকিং-হাইকিং করেছি। আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো পর্বতেও অভিযান করেছি। প্রস্তুতি নিয়েছি অন্তত এক বছর ধরে। অফিসের সিঁড়ি বেয়ে নিয়মিত ১০ তলা ওঠানামা করতাম আর সন্ধ্যার পর রমনা পার্কে দৌড়াদৌড়ি। এই পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের জন্য বরফের দেয়াল বেয়ে আরোহণের দক্ষতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে লাগবে অতি উচ্চতায় চলার যথেষ্ট সক্ষমতা। আমার উদ্দেশ্য পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করা।’ জাফর সাদেক বলেন, পর্বতারোহণকে বলা হয়ে থাকে কিং অব স্পোর্টস। এই খেলায় কোনো রেফারি নেই, দর্শকদের হর্ষধ্বনি নেই। নিজের সীমাবদ্ধতার গ-ি পেরিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে একা এগিয়ে যেতে হয়। জানা গেছে, পর্বতারোহণের পাশাপাশি তরুণ এই পর্বতারোহী সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন। নিয়মিত রক্তদান করেন তিনি।