বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে সোনালি ধান। দিগন্তজুড়ে থাকা এই সোনালি ধানের ম ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন ১০ থেকে ১২ জন যুবক। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২২। ধান কাটায় তারা এতই ব্যস্ত যে, নিজেদের মধ্যে কথা বলার মতো ফুরসত নেই। গত বুধবার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া গ্রামের এক মেঠো সড়ক ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের দেখা মেলে। পাশে থাকা কৃষক সেকান্দার আলী জানান, তারা সবাই শিক্ষিত। কেউ পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে, কেউবা স্নাতক, স্নাতকোত্তরে। এসব তরুণের পরিবারে অভাবও নেই। তবুও মজুরির বিনিময়ে আমন ধান কাটছেন তারা। শুধু ধানই কাটছেন না, কাটার পর মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি বিঘায় পাচ্ছেন ৭০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট। প্রতি বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াই করে বাড়ি পৌঁছাতে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু এই ছাত্ররা ৭০০ টাকায় সব করে দিচ্ছেন। প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমেই তাদের দেখা মেলে।
ওই কৃষকের কথা শুনতে শুনতে অনেকটা কৌতূহলী হয়েই যুবকদের লক্ষ্য করে এগোতে থাকি। সেখানে গিয়ে কথা হয় শাহীন আলম নামের এক যুবকের সঙ্গে। শাহীন আনন্দমোহন কলেজে স্নাতক প্রথমবর্ষে পড়ছেন। ‘বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘ’ নামক স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি তিনি। আর এই সংগঠনের পক্ষ থেকেই সব সদস্য মজুরির বিনিময়ে ধান কেটে দেন। কিন্তু টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তারুণ্যদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘অসহায় ও দুস্থদের শীতের জন্য গরম কাপড় কেনার জন্য মজুরি নিই। এই মৌসুমে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধান কাটার প্রাপ্ত অর্থ থেকে গ্রামের ১০০ জন দুস্থ মানুষকে শীতের জন্য নতুন কম্বল উপহার দেওয়া হবে।’ শাহীনের সঙ্গে থাকা সবাই দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। এই ধান কাটার জন্য শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়ি এসে মজুরি ভিত্তিতে কৃষকের ধান কাটছেন। ময়মনসিংহ নগরে অবস্থিত আনন্দমোহন কলেজে স্নাতকোত্তর পড়–য়া ও সংগঠনের উপদেষ্টা আজহারুল করিম বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে আমরা ধান কাটছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমরা দল বেঁধে ধান কাটি। গ্রামে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট থাকায় কৃষকরাই জমির ধান ঘরে তুলতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’ জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল মাওহা ইউনিয়নে একদল শিক্ষার্থীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বন্ধুর বাঁধন একতা ছাত্র সংঘ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের সদস্যরা এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থদের ঈদ উপহার, সড়ক সংস্কার, কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করছে।