শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্লাসের পাঠ শেষে নিড়ানি হাতে মাঠে শিক্ষার্থীরা

কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। প্রথমে শিক্ষার্থী পাওয়া ছিল কষ্টকর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হতো।

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ক্লাসের পাঠ শেষে নিড়ানি হাতে মাঠে শিক্ষার্থীরা

কৃষি ও খেত খামার। এই শব্দগুলো শুনে এখনো অনেকে নাক সিটকায়। দুই দশক আগে তা আরও প্রবল ছিল। কৃষি নিয়ে লেখাপড়ার কথা বললে অনেকে হাসাহাসি করতেন। জমির কামলা হতে আবার লেখাপড়া! সেই দিন বদলাচ্ছে। এখন কৃষি নিয়ে লেখাপড়া করে মানুষ উদ্যোক্তা হচ্ছেন। স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কুমিল্লা অঞ্চলে প্রথম কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজ এ উদ্যোগ নেয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। প্রথমে শিক্ষার্থী পাওয়া ছিল কষ্টকর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হতো। বর্তমানে কুমিল্লা কোটবাড়ি চৌরাস্তা সংলগ্ন ধনপুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছে। তাদের অধিকাংশই উদ্যোক্তা। বাকিরা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসে পাঠ গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের মাঠে চাষ করা টমেটো, বাঁধাকপি, স্ট্রবেরি নিড়ানি (লোহার তৈরি সরঞ্জাম) দিয়ে আগাছামুক্ত করছেন। শিক্ষক ধারণা দিচ্ছেন কোন সবজিতে কত পরিমাণের জৈব সার দিতে হবে। ফসলের কোন অবস্থায় কী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ল্যাবরেটরিতে করা হচ্ছে নানা পরীক্ষা। পাশের পুকুরে মাছ চাষ ও খামারে গবাদিপশুর রোগব্যাধি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি স্থানীয় একটি ¯œাতকোত্তর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তিনি বলেন, এখানে এসে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তা আমাকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামের মো. এখলাছুর রহমান ২০১০ সালে কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি গবাদিপশু ও মাছের ওষুধ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, এখানের ডিপ্লোমা কোর্সের বইগুলো অনেক সমৃদ্ধ। বইগুলো পড়লে কেউ বেকার থাকবে না।

কলেজের প্রশিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, ক্লাসরুমে আমরা বইতে পড়াই। পাশে মাঠে হাতেকলমে সবজি চাষ, মাছ চাষ, গবাদিপশু পালন ও এর রোগব্যাধি নিয়ে অবহিত করি। কলেজ অধ্যক্ষ পরমানন্দ গোস্বামী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। তিনি কৃষির ওপর জোর দিয়েছেন। দেশের খাদ্য সংকট দূরীকরণে কৃষির বিকল্প নেই। সঙ্গে এখানে অধ্যয়ন করে বেকার থাকার উদাহরণও নেই বললে চলে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ বলেন, কৃষির প্রতি আমার আজন্ম প্রেম। আমাদের কলেজটি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান।  আমরা বেকার নয়; উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করছি। এখানে আন্তরিকভাবে পাঠদান করা হয়।

সর্বশেষ খবর