চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। ছোট-বড় শতাধিক চাতালে এ শুঁটকি তৈরির কার্যক্রম চলছে। চলতি বছর প্রায় ২৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অফিস। প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে ১০ কোটি টাকার বেশি বিকিকিনি হবে। বর্তমানে শুঁটকির চাতালগুলোতে কেউবা মাছ কাটছেন কেউবা সেগুলো রোদের তাপে নাড়িয়ে শুকিয়ে নিচ্ছেন, কেউবা প্যাকেটজাত করছেন। শুঁটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততার কারণে শুঁটকি চাতালগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। শুঁটকির চাতালে কাজ করে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর শীত শুরু হওয়ার সময় চলনবিল অঞ্চলের নদী-খাল-বিলের পানি কমে যায়। এত প্রচুর পরিমাণ দেশি মাছ ধরা পড়ে। ছোট-মাঝারি ধরনের মাছগুলোকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা কমমূল্যে কিনে চাতালে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন। সিরাজগঞ্জের তৈরি শুঁটকি জামালপুর, চিটাগাং ও সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন আড়তে চলে যায়। সেখান থেকে দেশের বাইরেই চলে যায়। এ বছর ইতোমধ্যে উল্লাপাড়ায় ১২৬ টন এবং তাড়াশে প্রায় ৯৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির কার্যক্রম চলবে। এতে প্রায় ২৪০ টন শুঁটকি উৎপাদন হবে। তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় প্রায় ৭০-৮০ জন শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন। ছোটবড় অন্তত শতাধিক চাতাল রয়েছে। প্রতি চাতালে অন্তত ১০-১৫ জন করে নারী-পুরুষ কাজ করেন। এতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, প্রতি মণ কাঁচা মাছ ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। পরে প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুঁটকি তৈরি করা হয়। চাতালগুলোতে টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চ্যালা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুতুম, চিংড়ি, টাকি, গুছি, চান্দা, বোয়াল ও শৈল মাছসহ ছোট-বড় অসংখ্য মিঠাপানির দেশি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হয়। জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুঁটকি শুকানোর কাজ। তিনি আরও জানান, সুস্বাদু হওয়ায় চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদা সারা দেশে।শুঁটকি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, চলনবিলে শুঁটকি তৈরির পর বাজারজাত করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয়। তারপর শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক ব্যবসায়ী চাতাল থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন শুঁটকি।
মহিষলুটি বাজারের ব্যবসায়ী আলম প্রামাণিক বলেন, শুঁটকি ব্যবসা করতে লাখ লাখ টাকা পুঁজি লাগে। এর অভাবে ভালোভাবে ব্যবসা করা যায় না। এটি একটি ভালো ব্যবসা হলেও সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। কোনো ব্যাংক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে গতি পাচ্ছে না শুঁটকি ব্যবসা। তার মতে সরকারি সহায়তা পেলে শুঁটকির বাজার আরও সম্প্রসারিত হতো। এমনকি রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিদেশেও রপ্তানি করা যেত। তিনি আরও জানান, একটি চাতালে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে সংসার চালিয়ে থাকেন। সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ কারণে সরকারের শুঁটকি ব্যবসায়ীদের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।