শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নে কাইকারটেক ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কাইকারটেক হাট। এক সময় এই হাটে হাতি-ঘোড়া বেচাকেনা হতো। প্রচার আছে রাজা-বাদশাহদের আনাগোনাও ছিল এই হাটে। গ্রামবাংলার প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে সপ্তাহের রবিবার সকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেখা মিলবে এ হাটের। নারায়ণগঞ্জের আশপাশের জেলা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের আনাগোনা রয়েছে এই হাটে। গত সপ্তাহের মতো কাল রবিবারও বসবে এই হাট। সরেজমিন গত রবিবার গিয়ে দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় সব বস্তু সামগ্রী পাওয়া যায় এই হাটে। হাটে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখা মিলবে উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই বেচাকেনায় ব্যস্ত। হাটে পাওয়া যাবে মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী যেমন-জাল, বড়শি, টেঁটা ইত্যাদি।

এ ছাড়াও রয়েছে শাক-সবজি, খাল ও নদীর মাছ, মসলা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কবুতর, কাস্তে, দা, বঁটি, কুড়াল, জামা-কাপড়, কলমের গাছ, বাঁশ, কাঠসহ নিত্য ব্যবহার্য নানান পণ্য। ফলের মৌসুমে এখানে আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা রকম ফল ও আসবাবপত্র বানানোর নানা উপকরণ হাটে ওঠে। হাটে এলে মনে হবে, কী নেই এই হাটে? এই হাটের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে পুতা মিষ্টি নামে এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। অনেকেই এই মিষ্টিকে শিলপুতাও বলে থাকেন।

হাটে আসা শরীফুল ইসলাম নামে এক মিষ্টি বিক্রেতা জানান, একেকটি মিষ্টি আধা কেজি থেকে এক কেজি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ২০০ টাকা।

এ ছাড়াও তার দোকানে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, রুটি, ডাল-ভাজি বিক্রি হয়ে থাকে। হাটে মিষ্টির ক্রেতা নরসিংদী বাবুরহাটের কাপড় বিক্রেতা বাবুল শিকদার জানান, পুতা মিষ্টি পাগল আমি ছোটবেলা থেকেই। আমার বাবা মরহুম কাজী শিকদারের হাত ধরেই ৩০ বছর ধরে হাটে আসা যাওয়া। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন এই বিখ্যাত পুতা মিষ্টি খেতে। অনেকে আবার পরিবারের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যান। এই হাটে ৬৫ বছর ধরে শরবত বিক্রি করেন মজিবর রহমান। তিনি জানান, এই কাইকারটেক হাটটি পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে। তিনি এই হাটে ৬৫ বছর ধরে শরবত বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে বয়স হয়ে যাওয়ায় তার ভাগিনা আশরাফ উদ্দীন তাকে সঙ্গ দিয়ে থাকেন। ভাগিনা আশরাফ জানান, মামার সঙ্গে দোকানে আখের গুড়, লেবু ও বরফের মাধ্যমে সুমিষ্ট শরবত তৈরি করে বিক্রি করে আসছি সেই ছোট থেকেই। দূর-দূরান্ত থেকে যারাই এই হাটে বাজার করতে আসেন তারা এই দোকানের শরবত না খেয়ে যান না। আবদুর রহিম নামে কাইকারটেক হাটের এক কাঠ বিক্রেতা জানান, তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে কাঠ বিক্রি করেন। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতো নেই। যার কারণে কাঠের ব্যবসা এখন খারাপ যাচ্ছে। দীর্ঘদিন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছেড়েও দিতে পারছেন না।

সর্বশেষ খবর