শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘হলুদ থলেওয়ালা’র গল্প

মেহমানখানা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ার স্বপ্ন

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

‘হলুদ থলেওয়ালা’র গল্প

বিয়েবাড়ি বা কমিউনিটি সেন্টার, যেখানে খাবার অবশিষ্ট থেকে যাওয়ার খবর আসে সেখানেই ছুটে যায় হলুদ প্যাকেটওয়ালারা। নিজস্ব উদ্যোগে খাবার সংগ্রহ করে রাতে ঘুরে বেড়ান নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। অভুক্ত, বাস্তুহীন মানুষের কাছে সে খাবার পৌঁছে দেন যত্ন সহকারে। খাবার পেয়ে তৃপ্তি পান ক্ষুধার্ত মানুষগুলো। বন্দরনগরীতে ‘স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হলুদ থলে’ নামে পাঁচ বছর ধরে অভুক্ত মানুষের জন্য এ আয়োজন করছে। এ সময় প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে এক বেলা খাবার প্রদান করেছে তারা। ২০১৭ সালের থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত ১টার দিকে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে ফুটপাতে পড়ে থাকা অভুক্তদের কষ্ট দেখে এই দুর্দশা দূর করার জন্য ফুডব্যাংক টিম চালু করা হয়। সর্বপ্রথম নগরীর সিআরবিতে যাত্রা শুরু করে ‘হলুদ থলেওয়ালা’। স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, আনোয়ারার মালঘর গ্রাম থেকে স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের যাত্রা। এরপর নানা সামাজিক কাজের পাশাপাশি আমরা শহর এলাকার অভুক্ত মানুষের মাঝে নানা দিবস ও জন্মদিনে খাবার বিতরণ করে থাকি। এক সময় চিন্তা করলাম শহরের নানা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে, মেজবানসহ ছোটখাটো নানা আয়োজন হয়। সেখানে যে খাবার অবশিষ্ট থাকে তা ফেলে দেয় ডাস্টবিনে। এসব খাবার, খাবার অনুপযোগী নয়। সেই ভাবনা থেকে এসব খাবার সংগ্রহ করা শুরু করি।

হলুদ থলের গল্প : গভীর রাত, না খেয়েই ফুটপাতে শুয়ে আছে অসংখ্য অভুক্ত মানুষ। তাদের খবর রাখে কয়জন? শহর বড়ই নিষ্ঠুর, আমরা হোটেল-রেস্তোরাঁয় অনেক খাবার নষ্ট করি। বকশিশের নামে মোটা অঙ্কের টাকা ওয়েটারকে দিই। কিন্তু রাস্তার পাশের সেই অভুক্ত মানুষের প্রতি কারও কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। তাদের দুই টাকা দিতে আমরা অনেকবার চিন্তা করি। এভাবেই ‘স্বপ্নযাত্রী ফুডব্যাংক’ করার চিন্তা আসে কামাল হোসেনের। সারা দিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরার পরও যখন ভাতের টাকা জোগাড় হয় না তখন একটা বন বা এক গ্লাস পানি খেয়েই ফুটপাতে শুয়ে থাকে এসব মানুষ। রাতের গভীরে পেটের ভিতর যখন ক্ষুধা পেলে ঘুম ভেঙে যায় তখনই পাশে দেখা যায়, একজন ‘হলুদ থলেওয়ালা’ দাঁড়িয়ে আছেন খাবারের প্যাকেট হাতে। তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না অনেকে। খুশিতে চোখে জল চলে আসে। খাদ্য সংগ্রহের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, গভীর রাতে আমাদের এই প্রোগ্রাম হয়, যা অত্যন্ত কষ্টকর। শীতের গভীর রাত, বর্ষার কোমর পানি, হরতাল কিংবা কভিডের মতো প্রতিকূলতার সময়েও আমরা কাজ করেছি। অনেক সময় বাসার গেট বন্ধ থাকে, দেয়াল টপকে আসতে হয়েছে বাসায়। বর্ষার কোমর সমান পানিতে খাবার বিলি করতে গিয়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। এমনকি করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে হৃদয়, আবিদ, তালহা, নাঈম, জাহেদ ও রুবেল।

এ ছাড়াও গভীর রাতে পুলিশের জেরা, পাগলের দৌড়ানি ও টোকাইদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। ভবিষ্যতে ‘হলুদ থলেওয়ালা’রা একটি মেহমানখানার পাশাপাশি পুনর্বাসন কেন্দ্র করে সবাইকে পুনর্বাসন করার স্বপ্নও দেখেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর