শিরোনাম
শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বইয়ের ফেরিওয়ালা সুনীল গাঙ্গুলী

আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ

বইয়ের ফেরিওয়ালা সুনীল গাঙ্গুলী

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কুমরিয়া। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে কলাবাড়ী ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে হয় এই গ্রামে। কুমরিয়া গ্রামে হাজার দুয়েক মানুষের বসবাস।

তাদের একজন শিক্ষক সুনীল কুমার গাঙ্গুলী। আর্থিক সংকটের কারণে বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। বর্তমানে স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূসহ এক নাতিকে নিয়ে তার সংসার। সংসারের সীমাবদ্ধ গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে ভালো লাগে না তার। তাই সমাজের বৃহত্তর গণ্ডির বিশেষত নতুন প্রজন্মের মাঝে নিজের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ছুটে বেড়ান এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। পেনশনের টাকা সংসারে খরচ না করে সেই টাকায় নতুন নতুন বই কিনে তুলে দেন পাঠকদের কাছে। উপজেলা সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৪ সালে অবসর নেওয়ার পর নিজ বাড়ির পাশে একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার। বর্তমানে এই পাঠাগারে ৬ শতাধিক বই রয়েছে। তার আন্তরিক ইচ্ছা পাঠাগারটি আরও বই দিয়ে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পারছেন না বলে জানান বইয়ের এই ফেরিওয়ালা। পাঠাগারটিতে তেমন কোনো আসবাব না থাকায় অনেক বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ঝেড়েমুছে নিজের সন্তানের মতো বইগুলো আগলে রাখেন তিনি। অন্যান্য পাঠাগারের চেয়ে সুনীল বাবুর এই পাঠাগারটি একটু ব্যতিক্রম। এখানে কোনো চেয়ার-টেবিল কিংবা তেমন পাঠক সমাগমও নেই। সুনীল বাবু তার বইয়ের তালিকা নিয়ে পাঠকদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যান। যে পাঠকের যে বইটি পছন্দ হয়, সুনীল পরের দিন ওই পাঠককে পছন্দের বইটি দিয়ে আসেন। পড়া শেষ হলে তিনি গিয়ে বইটি নিয়ে আসেন। বিনিময়ে তিনি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেন না। কেউ খুশি হয়ে টাকা দিলে তা দিয়ে পাঠাগারের নতুন বই কেনেন। তবে পাঠকের চাহিদামতো বই না থাকার কারণে দিন দিন পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে এই পাঠাগারে সহস্রাধিক নিয়মিত পাঠক রয়েছে।

সুনীল কুমার গাঙ্গুলী বলেন, পাঠাগারে বই ও আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছি। এখনো কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। আমি চাই এলাকার যারা বিত্তবান, তারা পাঠাগারটির উন্নয়নে এগিয়ে আসুক।

সর্বশেষ খবর