শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙারি ছেড়ে বইয়ের ফেরি

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

ভাঙারি ছেড়ে বইয়ের ফেরি

’৯০-এর দশকে এক প্রতিবেশীর হাত ধরে চট্টগ্রামে আসেন হবিগঞ্জের মোহাম্মদ ফারুক। এরপর নগরীর পাঠানটুলী এলাকায় শুরু করেন ভাঙারির ব্যবসা। বছর খানেক এ ব্যবসা করার পর দোকানে আসতে থাকে পুরনো বিনোদন ম্যাগাজিন, গল্পের বইসহ  নানা ধরনের বই। সে সময় মানুষজন তার কাছ থেকে এসব বই ক্রয় করে নিত। এভাবে বেশ কয়েকজন ক্রেতা পাওয়ার পর ভাঙারির ব্যবসা বাদ দিয়ে শুরু করেন পুরনো বই সংগ্রহ। নিজেও পড়েন, শুরু করেন পুরনো বই বিক্রির ব্যবসা। ধীরে ধীরে তা নেশায় পরিণত হয় ফারুকের। সেই কৈশোর, তারুণ্য পেরিয়ে এখন তিনি বয়স্ক। তবে ছাড়তে পারেননি বইয়ের মায়া।  এই বয়সেও ফেরি করে চলছেন পুরনো বই। নগরের কাজীর দেউড়ি পুলিশ বক্স ও চকবাজারের গুলজার মোড় এলাকার ফুটপাতে বসেই বিক্রি করেন জ্ঞানের বাতি। বই বিক্রি করার পাশাপাশি পড়েছেন তিন দশকে প্রায় ১০ হাজারের মতো বই।

‘বাবা ভয় হয় কখন কী হয়ে যায়। করোনার সময় থেকে বিক্রি নেই। যার কারণে পুরো পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে এই বয়সে ব্যাচেলর বাসায় থাকছি। আগে দিনে ২ হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি করতেই অনেক কষ্ট হয়। বয়স হওয়ার কারণে এখন আর সেভাবে শরীর কুলিয়ে ওঠে না। প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করি। এরপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে জোহরের নামাজ পড়ে ভাত খেয়ে বসি একটু। এরপর বিকাল ৩টার দিকে বই নিয়ে বের হই। সপ্তাহের ছয় দিন কাজীর দেউড়ি মোড়ে বসি আর শনিবার চকবাজার গুলজার মোড়ে বসি।’ এভাবে নিজের প্রতিদিনের কাজের বর্ণনা দিলেন ফুটপাতে ৩০ বছর ধরে পুরনো বই বিক্রি করা মোহাম্মদ ফারুক।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আসার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যাগে করে পুরাতন বই নিয়ে আসত। অনেক ভাঙারি দোকান থেকে গিয়ে বই কিনেছি। সব বই পুরাতন তা নয়, আন্দরকিল্লা গিয়ে নতুন বইও কিনেছি। এই ৩০ বছরে অনেক বই পড়েছি, বিক্রিও করেছি। এখন বই সেভাবে মানুষ পড়ে না, শিক্ষার্থীরাও দেয় না। এক সময় বিচিত্রা, আনন্দসহ অনেক ম্যাগাজিন ছিল। লোকজন সে বই নেওয়ার জন্য নিয়মিত আসত। এখন মানুষ পড়ার অভ্যাস ভুলে গেছে। সবাই এখন যে যার মতো মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। কাগজের দাম বাড়ার কারণে বই পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে, লোকজন কেজি দরে বই বিক্রি করে টাকার জন্য। যদি সবাই এভাবে বিক্রি করে ফেলে তাহলে আমার মতো পুরনো বই বিক্রেতাদের কী হবে?’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর