শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এক টাকায় আনন্দ বিলি

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সাকিব এখন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে তার কাজেরও পরিধি। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘এক টাকায় আনন্দ’

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

এক টাকায় আনন্দ বিলি

সালটা ২০১৭। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার গোলাম বারি সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের তৎকালীন নবম শ্রেণির ছাত্র জাবের হোসাইন সাকিব স্কুলে যাওয়ার পথে দেখেন রাস্তার পাশেই শুয়ে আছেন কিছু ক্ষুধার্ত মানুষ। কিন্তু তাদের পাশে কেউ তো দাঁড়ায়ই না উল্টো এ পরিস্থিতি দেখে সবাই হাসিঠাট্টা করতেন। যা ছোট্ট সাকিবের মনে ব্যাপক নাড়া দেয়। পরে তার আরও কয়েকজন বন্ধু টিফিনের টাকা থেকে সঞ্চয় করে ওই ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে চাল-ডাল বিতরণ করেন। এরপর থেকে মানবিক কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন সাকিব। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি এখন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে তার কাজেরও পরিধি। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘এক টাকায় আনন্দ’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কয়েক বছরে এ সংগঠনের সেবা গ্রহণ করেছেন কমপক্ষে ১০ হাজার হতদরিদ্র মানুষ। ‘এক টাকায় আনন্দ বিলি’র প্রতিষ্ঠাতা জাবের হোসাইন সাকিব বলেন, ‘ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের পাশাপাশি আমরা বস্ত্র,  কোরআন শরিফ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করি। এ ছাড়া হতদরিদ্রদের সাবলম্বী করতে রিকশা এবং ভ্যান গাড়ি বিতরণ করি। এ পর্যন্ত আমরা ১০ হাজারের অধিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের বিতরণ করা প্রত্যেকটা জিনিসের এক টাকা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করি। সেবা গ্রহীতারা আমাদের কাছ থেকে এক টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন। তাই আমরা এর নাম দিয়েছি ‘এক টাকায় আনন্দ বিলি’।’

জানা যায়, ২০১৭ সালে স্কুলের ১০ বন্ধুকে নিয়ে ‘জিজিবিসিএইচ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে সাকিব মানবিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এ সংগঠনের সদস্যরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায় এবং দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা বন্ধুদের আর্থিকভাবে সহায়তা করত। এসএসসি পাস করে সাকিব চলে আসেন চট্টগ্রাম নগরীতে। ভর্তি হন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস ডিপার্টমেন্টে। পরে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত তরুণকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এক টাকায় আনন্দ’। সংস্থার মাধ্যমে পথশিশু, অসহায়, ছিন্নমূল পরিবার, ক্ষুধার্ত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য খাবার, এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য পবিত্র কোরআন শরিফ, টুপি, আতর, পাঞ্জাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। শীতার্ত মানুষ ও আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য উষ্ণতার কম্বল, এতিম বাচ্চাদের জন্য শীতকালীন পিঠা উৎসব, রিকশাচালকদের জন্য বর্ষা মৌসুমে রেইন কোট, পবিত্র মাহে রমজানে সাহরি ও ইফতার বিতরণ উৎসব, ঈদে ভালোবাসার ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ, কোরবানির ঈদে রান্নাকৃত কোরবানির মাংস ও আটার রুটি বিতরণ উৎসব করে আসছে। এ ছাড়া ঘরপোড়া সর্বহারা পরিবারকে সেলাই মেশিন উপহার, অসহায় রিকশাচালককে রিকশা উপহার দেওয়াসহ সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত এ সংস্থার মাধ্যমে সেবা পেয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রাপ্ত খাবার, কাপড়সহ, রিকশা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মাত্র এক টাকায় বিক্রি করে থাকে। শুধু খাদ্য বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় তাদের কার্যক্রম। রক্তদাতা সংগ্রহ, ক্যান্সার রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দেওয়াসহ তাদের বিপদ-আপদে সব সময় ছুটে চলে এ সংগঠনের সদস্যরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর