শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুশান্তের ফলের বাগানে পাহাড়ে কর্মসংস্থান

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

সুশান্তের ফলের বাগানে পাহাড়ে কর্মসংস্থান

সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। একজন কৃষি উদ্যোক্তা। বেকারত্ব দূর করতে কৃষিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারীপাড়ায় বোনেন নিজের স্বপ্ন। ১০ একর জমিতে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন প্রায় ২০ প্রজাতির ফলদ বাগান। নিজের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান করেছেন আশপাশের বেকার যুবকদেরও। বাগান ঘুরে দেখা যায়, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারীপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে সুশান্তের ফলের বাগান। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ফলের বাগান। মৌসুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৃজন করেছেন নানা প্রজাতির ফলের বাগান। তাই বারোমাসি ফলের সঙ্গে ওই বাগানে আছে মৌসুমি ফলও। আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, পেঁপে, ড্রাগন, কমলা, মাল্টা, মিষ্টি লেবু, বলসুন্দরী, ভারত সুন্দরী, দেশি বরই, রামভুটান, আমলকি, লটকন, সুপারি, নারিকেল, পেয়ারা, জাম্বুরা ও তেঁতুলসহ নানা জাতের ফলমূল এ বাগানে রয়েছে। এখনো থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা-পাকা নানা প্রজাতির ফল। মাত্র পাঁচ বছরে ফল বাগানে সফলতা পেয়ে তাক লাগিয়েছেন কৃষি বিভাগকেও। বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে মঙ্গল মণি চাকমা, সোনামণি চকমা ও সজল চাকমা বলেন, বেকার বসেছিলাম। রাঙামাটিতে বড়  কোনো মিল-কারখানা নেই যে চাকরি করব। জুম চাষ আর মাটি কাটার ওপর নির্ভর ছিল জীবন। তাই সব সময় কাজ মিলত না। কিন্তু সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাগানে কর্মসংস্থান হয়ে বেকারত্বের পাশাপাশি পরিবারের অভাবও দূর হয়েছে। বাগানের উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, চাকরি না পেয়ে বাগান করার পরিকল্পনা আসে তার মাথায়। বেকারত্ব দূর করতে নিজ জমিতে বাগান শুরু করেন। মাত্র স্বল্প পুঁজিতে। বাগানে ফল আসার পর বাড়ানো হয় পুঁজি। কঠোর পরিশ্রমের পর বাগানে সফলতা আসতে শুরু করে। বাগানের ফল বিক্রির টাকায় প্রসারিত করা হয় বাগান। একই সঙ্গে তার বাগানে আশপাশের বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। এখন প্রতিটি বাগানের ফল বিক্রি হয় লাখ টাকায়। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত এসব ফলের চাহিদা বেশি। তাই বাজারজাতেও নেই তেমন কোনো সমস্যা। বর্তমানে তার বাগান বলসুন্দরী, ভারত সুন্দরী ও আপেল কুলের দখলে। বাগানজুড়ে কুলে ভরপুর। প্রতিদিন এ বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয় ২০ থেকে ৪০ কেজি কুল। এরই মধ্যে অর্ধ লাখ টাকার কুলও   বাজারজাত করেছেন তিনি। সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা পেলে এ বাগান আরও প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সুশান্তের। এদিকে সুশান্তের বাগানের খবর পেয়ে পরিদর্শন করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।  বাগানের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি  অধিক ফলন ও উর্বরতার পরামর্শও দেন তারা। এ ব্যাপারে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল জানান, সুশান্তের মতো দীর্ঘমেয়াদি ফলদ বাগান করার মতো  উদ্যোক্তা তৈরি করা গেলে কৃষিতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে পার্বত্যাঞ্চলে। তিনি আরও বলেন, সুশান্তের বাগানের ফলমূল যেমন মানুষের ফলের চাহিদা মেটাচ্ছে তেমনি কৃষকদেরও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর