শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৌমাছির গ্রাম

ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নজরুল নগর এবং চরমানিকা ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝাঁকে ঝাঁকে বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। মৌচাকের এমন উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

এম আবু সিদ্দিক, চরফ্যাশন (ভোলা)

মৌমাছির গ্রাম

নজরুল নগর ইউনিয়নের চর নলুয়া, চর নুরুদ্দিন, চর আর কলমী, মাঝের চর, চর হরিষ এবং চর মানিকা ইউনিয়নের উত্তর আইচা, দক্ষিণ আইচা, দৌলতপুর, কচ্চপিয়া, ভাসানচরসহ আশপাশের গ্রামগুলোর গৃহস্থের বাগানে, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ ভবনে মৌচাকের ছড়াছড়ি। চর নলুয়া গ্রামের নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে ১৬টি, সংলগ্ন অধ্যক্ষ নজরুল নগর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের চারটিসহ এখানকার আশপাশের প্রত্যেক স্কুল, মাদরাসা ও মসজিদে দুই বা ততোধিক মৌচাক বসেছে। এসব গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে মৌচাক বসেনি। মাঝের চর গ্রামের আবদুল মালেক সর্দার বলেন, দুই দশক আগে গ্রামের বাড়ি বাড়ি মৌচাকের বাসা বসত। তখনকার দিনে গ্রামজুড়ে তিল- তিষিসহ নানান রবিশস্য চাষ হতো। এসব শস্যের ফুলের মধু সংগ্রহ করত মৌমাছি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এসব রবিশস্যের আবাদ বিলুপ্ত প্রায়। ফলে গ্রাম থেকে মৌচাকও বিলুপ্ত হয়ে যায়।

চর নলুয়া গ্রামের কৃষক মাইন উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আশপাশের গ্রামগুলোতে সরিষাসহ নানান তৈলবীজের চাষ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৌচাকের সংখ্যাও। চলতি বছর মৌচাকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। গত দুই দশকে এমন চিত্র আর দেখা যায়নি।

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, মৌচাকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তৈলবীজের চাষ বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। সরিষা চাষ বৃদ্ধির ফলে গ্রামে গ্রামে মৌচাকের উপস্থিতি বাড়ছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এখানে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তা থেকে ৩ হাজার মে. টন ফসল উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। গত মৌসুমে চাষের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার হেক্টর। উৎপাদন ভালো এবং কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়ায় কৃষক নতুন করে তৈলবীজের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। উত্তর চর মানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদরাসা ভবনের পিলারে মৌমাছির দল আটটি মৌচাক তৈরি করে বসবাস শুরু করেছে। এতে খাঁটি মধু প্রাপ্তির সম্ভাবনার পাশাপাশি মাদরাসায় অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের কামড়ে আহত করতে পারে এমন আতঙ্কে আছে ওই মাদরাসার শিক্ষকরা।

মাদরাসার সুপার মাওলানা সালেহ উদ্দিন বলেন, মধু আল্লাহর দান। মৌমাছি সব সময় নিরাপদ স্থানে মৌচাক তৈরি করে বসবাস করে। আমি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে বলেছি। যেন কেউ মৌচাকে ঢিল না মারে।

চর নলুয়া রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, এখন সরিষা গাছে ফুল আছে। সরিষার ফুল থেকে মৌমাছির দল মধু সংগ্রহ করে নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি মৌচাকে জমা করবে। তার স্কুলের ভবনে ১০-১২টি মৌচাকের বাসা রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আতঙ্কে থাকেন কখন জানি কোন শিক্ষার্থী মৌচাকে ঢিল মারে! তবে মৌমাছির বাসায় ঢিল মারলেও এখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর