শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পারন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

পারন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল তীরের গ্রাম বরুনা। এই গ্রামেই প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার ‘পারন’। মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত এই পারন কিনে নেন হাওরের মাছচাষি ও জেলেরা।

সরেজমিন বরুনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বাঁশ আর বেত নিয়ে বসেছেন কল্পনা রানি সরকার। নিজের হাত দিয়ে বুনন করছেন পারন। বাঁশের কাঠির সঙ্গে সুতো বেঁধে দিচ্ছেন। তার পাশে বসে পারন বানাচ্ছেন বাড়ির অন্য নারীরাও। এভাবে তিন থেকে চার দিন কাজ করে তৈরি করেন একটি পারন। তার মতোই বাড়ির অন্যান্য নারী ও পুরুষরা এই পারন বানানোর কাজ করেন। যুগ যুগ ধরে এই বাড়িতে পারন বানানোর কাজ হচ্ছে, যা বাড়িতে এসে কিনে নেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

কল্পনা রানি সরকার বলেন, একটা পারন বানাতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করেন। ক্রেতারা বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যায়। একটি বড় বাঁশ দিয়ে ১২টির মতো পারন বানানো যায়। ২০টি পারন বানাতে ১৬ থেকে ১৭০০ টাকা খরচ হয়। ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি করি। পারন দিয়ে মাছ ধরা হয়। দেশি ছোট মাছ ধরতে এগুলো ব্যবহার হয়। এসব বানিয়ে আসলে এখন আর তেমন লাভবান হওয়া যায় না। সময় ব্যয় এবং  লাভ হিসাব করলে তেমন পোষায় না। ঠাকুর মণি সরকার বলেন, আমি প্রায় ৩০০ বছর ধরে পারন বানাচ্ছি। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে করে আসছি। আসলে শেষমেষ পোষায় না। কোনোভাবে জীবন চলে যায়। বাঁশ, বেত, সুতা, কপালি লাগে। এসব কিছু কিনে আনতে হয়। ঘরের সবাই মিলে কাজ করে লাভ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা; যা দিয়ে আমাদের চলে না। এই শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এটা আসলে মৌসুমি ব্যবসা। কেউ ২০-৩০ হাজার টাকার পারল বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে গ্রামে লাখ টাকার বেশি পারন বিক্রি হয়।

নগেন্দ্র সরকার বলেন, ২৫ বছর ধরে পারন বানাচ্ছি। এখন বৃদ্ধ বয়সেও বানাতে পারি। আমাদের পরে আর কেউ পারন বানাবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আমাদের ছেলেমেয়েরা আর এসব কাজ করে না। তাদের কেউ লেখাপড়া করে, কেউ অন্য কাজ করে। বাইক্কা বিলের বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী  বলেন, এটি আমাদের ঐতিহ্য বলা যায়; যা সংরক্ষণ   করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর