শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঈশ্বরদীতে প্রথম নারী স্টেশনমাস্টার

পাবনা প্রতিনিধি

ঈশ্বরদীতে প্রথম নারী স্টেশনমাস্টার

জীবন সংগ্রামে বিজয়ী এক নারী, যিনি সব বাধা দূর করে অসহায়ত্বকে জয় করেছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী এক সফল নারী হিসেবে। দেশের সব জায়গায় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীরা দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে। যার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ের নারী স্টেশনমাস্টার মাহবুবা শাহীনূর সম্পা। নারীদের এখানে চাকরি করা যাবে না, ওখানে চাকরি করা যাবে না। এই পুরনো ধারণাকে পেছনে ফেলে আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। ভয়কে দূরে ঠেলে হাসিমুখে নারীরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পেরেছেন। পুরুষদের সঙ্গে একই কাতারে থেকে নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই।

শতবর্ষী বৃহত্তর ও পুরনো রেলওয়ে জংশন স্টেশন পাবনার ঈশ্বরদী জংশন। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রেলপথে চলাচল করার জন্য ঈশ্বরদী স্টেশনটির গুরুত্ব সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। সেই গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন পরিচালনা করার জন্য স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এক অদম্য সাহসী নারী স্টেশনমাস্টার সম্পা।

২০১৬ সালে তিনি রেলওয়েতে সহকারী স্টেশনমাস্টার হিসেবে যোগদান করেন। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুরের মিঠাপুর হলেও তাঁর বাবা সৈয়দপুরে রেলওয়ে কর্মচারী থাকায় শৈশব কৈশোর কেটেছে সৈয়দপুরেই। ২০০৬ সালে সম্পা সৈয়দপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে সৈয়দপুর মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড় সন্তান। ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনে নারী স্টেশন মাস্টার মাহবুবা জানান, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে ১০০ বছরের ইতিহাসে আমি সর্বপ্রথম নারী হিসেবে যোগদান করেছি। আমাকে দেখে তো অনেকেই অনেক রকম কথা বলেছেন। অসম্ভব! তুমি ঈশ্বরদীতে কখনো দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। সম্ভবই নয়। নারী হয়ে স্টেশনমাস্টারের দায়িত্ব পালন করা কিন্তু খুবই কঠিন কাজ! ঈশ্বরদী জংশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে নারী স্টেশনমাস্টার। এই চাকরি মেয়েদের জন্য নয়। এখানে দিনে-রাতে শিফটিং ডিউটি পড়বে। এ স্টেশনে প্রচুর কাজ, যেখানে একটি মেয়ে কখনো দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। আমি ভয়কে দূরে ঠেলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি হাসিমুখে এবং পেরেছিও। আমাকে স্টেশনের স্টাফরা সহযোগিতা করেছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই এই চ্যালেঞ্জিং পেশায়, দেশের কাজে তাই স্বস্তিতে থাকি। নারী স্টেশনমাস্টার মাহবুবা শাহীনূর সম্পা আরও জানান, ‘স্বপ্ন ছিল ভালো একজন শিক্ষিকা হব। এ জন্য ছাত্রজীবন থেকে অনেক টিউশনি করেছি। ভাগ্যচক্রে আমি মাস্টার তো হয়েছি তবে স্কুলমাস্টার না হয়ে স্টেশনমাস্টার। ২০১৬ সালে স্টেশনমাস্টার হিসেবে যোগদান করি। ২০১৭ সালে আমার বিয়ে হয়, আমার স্বামীও স্টেশনমাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ট্রেন কন্ট্রোলার হিসেবে রয়েছেন। আমাদের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। সম্পা আরও জানান, ২০০৮ সালে আমার বাবা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরিবারের অনেক দায়বদ্ধতা ছিল, বাড়ির বড় সন্তান আমি।  আমাকেই কিছু করতে হবে। দৃঢ় মনোবল ছিল বলেই চাকরিটা হয়েছে।

সম্পা নারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নারীরা কোনদিকে যাবে, সেই লক্ষ্য ঠিক থাকলে সেখানে অবশ্যই পৌঁছানো সম্ভব।  শুধুই ভাবতে হবে, ছেলেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না। মেয়েরা আর পিছিয়ে থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর