শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্যরকম পাঠাগার

টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গড়লেন বইয়ের সংগ্রহশালা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

অন্যরকম পাঠাগার

গাইবান্ধা সরকারি কলেজে স্নাতকে পড়ছেন মেহেদী হাসান (২০)। ছোটবেলা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছেন তিনি। গ্রামের পিছিয়েপড়া মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে টিফিনের টাকা জমিয়ে নিজ গ্রামে তৈরি করেছেন ‘বইঘর পাঠাগার’। শহরে বই পড়ার সুযোগ কমবেশি থাকলেও গ্রামের চিত্র একেবারে ভিন্ন। গ্রামের মানুষের বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও পাঠাগার না থাকায় সেই সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। ছোটবেলা থেকেই নিজ গ্রামে জ্ঞানপিপাসু মানুষের জন্য একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল মেহেদীর। সেই স্বপ্ন থেকেই ২০২০ সালে পাঠাগার স্থাপন করেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার টেংগরজানি গ্রামের মো. হান্নান মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান। তিনি গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতকে পড়ছেন। গ্রামে নিজের বাড়ির সামনেই গড়ে তোলেন ‘বইঘর পাঠাগার’। বর্তমানে পাঠাগারটি আলো ছড়াচ্ছে গাইবান্ধা জেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নসহ পার্শ¦বর্তী উপজেলার মানুষের মাঝে।

জানা যায়, জেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই টেংগরজানি গ্রাম। সেখানে ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থ একটি আধাপাকা টিনের ঘরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘বইঘর পাঠাগার’। শিশু-কিশোরদের বই থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনাসমগ্র, জীবনী, ছোটগল্প, কবিতা, ভাষাতত্ত্বসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখার বই রয়েছে এই পাঠাগারে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনার খোঁজ মেলে এখানে। মেহেদীর এই পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন এখানে। পাঠাগারের সদস্যদের জন্য বই বাড়িতে নিয়েও পড়ার সুযোগ রয়েছে। মেহেদীর পাঠাগারে অধিকাংশ পাঠক বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যান মেহেদী।

টেংগরজানি গ্রামের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এমন একটি পাঠাগার গড়ে উঠবে ভাবতে পারিনি। আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন পাঠাগারে গিয়ে পছন্দের বই পড়ছি। এখানে বই পড়তে খুব ভালো লাগে। আরেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচ মিনিট হেঁটেই ওই পাঠাগারে আসা যায়। তাই সময় পেলেই পাঠাগারে এসে বই পড়ছি এবং সেখান থেকে বই বাড়িতেও নিয়ে আসি। বই পড়া শেষ হলে ফেরত দিয়ে আবার নতুন বই নিয়ে আসি।’

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান বলেন, আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি, তাদের শহরে গিয়ে বই পড়তে অসুবিধা হয়। কারণ, দেশের বেশির ভাগ পাঠাগার শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার কারণ বর্তমানে সবাই ডিজিটাল প্ল্যাটফরম, গেমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই আমি আমার পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পরিচিতজনের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করা শুরু করি। কলেজে যাওয়ার ভাড়া ও টিফিনের অতিরিক্ত টাকা জমা করে ও বাবা-মায়ের সহযোগিতায় ২০২০ সালে শুরু করি পাঠাগার। সরকারি অনুদান ও সহযোগিতা পেলে পাঠাগারে বই বৃদ্ধি করা সহজ হবে। তাই এই পাঠাগারটিকে একটি আধুনিক পাঠাগার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর