শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্যরকম ঘরের হাট

শনিবারের সকাল ডেস্ক

অন্যরকম ঘরের হাট

এই হাটে বিক্রি হয় বিভিন্ন কারুকার্য খচিত রেডিমেড ঘর। দেশি-বিদেশি কাঠ, টিন আর লোহার তৈরি নান্দনিক এসব ঘর চাইলেই স্থানান্তর করা যায়।  আকারভেদে একেকটি ঘরের দাম পড়ে ২ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা

 

ঘর মানুষের কাছে এক শান্তির জায়গা। সেই ঘর যদি হয় টিন-কাঠের তৈরি তাহলে তো কথাই নেই। টিনের চালে শরতের বৃষ্টির ফোঁটার রিমঝিম শব্দে মনে জাগে অন্যরকম শিহরণ। টিন-কাঠের এ বাড়ি মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য। এ জেলার আদি নাম বিক্রমপুর। শৌখিন কিংবা নিম্নবিত্ত- এ অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ি টিন-কাঠ দিয়েই তৈরি। একসঙ্গে কয়েকটি ঘর। দেখতে বেশ, ঝকঝকে নতুন। কিন্তু এসব ঘরে এখনো কেউ থাকে না। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অনেক ঘরের দেখা মেলে। লৌহজংয়ের কলাবাগান কাঠপট্টি, টঙ্গীবাড়ির বেতকা, সিরাজদিখানের মালখানগর, কুচিয়ামোড়া বাজার, সদরের হাতিমারা, বজ্রযোগিনীসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কাঠের ঘরের হাট।

এ হাটে দেখা মিলবে বিভিন্ন আকারের বাড়ি। মাঝারি সাইজের একটি ঘর তৈরি করতে চারজন মিস্ত্রির ১৫ থেকে ২০ দিন লাগে। নদীভাঙন-কবলিত অঞ্চল বলে এখানে কাঠের ঘরের কদর বেশি। ভাঙনের শিকার হলে সহজেই সরিয়ে নেওয়া যায়। তা ছাড়া বিপদ-আপদে ঘর বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যায়। এ কারণেই এসব ঘরের চাহিদা বেশি। নাইজেরিয়ার লোহাকাঠ দিয়ে এ ধরনের ঘর তৈরি হয়। মিস্ত্রিদের বয়ানে জানা যায়, ‘একটি ২৩ বন্দের (২৩/১৩ ফুট) ঘর ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা, ২১ বন্দের (২১/১১ ফুট) ঘর আড়াই থেকে ৩ লাখ, আর ১৭ বন্দের (১৭/৯ ফুট) ঘর ১ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।’ আগে শুধু একতলা বা দোতলা ঘর তৈরি করে বিক্রি করা হতো, এখন তিনতলা ঘরও তৈরি করা হয়। ক্রেতারা ঘর কেনার পর কয়েকটি অংশ আলাদা করে নিয়ে যায়। বাড়িতে ভিটে তৈরি করে অংশগুলো জোড়া লাগালেই হয়ে যায় বাসের উপযোগী। মুন্সীগঞ্জে এই ব্যবসা শুরু হয় গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। শুরু করেছিল কাঠ ব্যবসায়ীরা। যদিও এখন মানুষের দৃষ্টি পাকা ভবনের দিকে। কারণ ভালো কাঠ দিয়ে একটি দোতলা ঘর বানাতে যা ব্যয় হয়, ওই টাকায় অনায়াসেই একটি পাকা ভবন করা যায়। কিন্তু এর পরও এই অঞ্চলের অধিকাংশ লোকই টিন-কাঠের ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি। তারা ঘরের ভিটি পাকা করে বানিয়ে চলছেন কাঠের ঘর।

মুন্সীগঞ্জে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। তারা যে কতটা শৌখিন- তা টিন-কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন ঘরগুলো দেখলেই বোঝা যায়। কয়েক বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন দোচালা, তিনচালা, চৌচালা ও সাতচালা ঘর। এর মধ্যে শুধু লৌহজং উপজেলাতেই প্রতি মাসে ১০০-১৫০টি নতুন ঘর নির্মিত হয়ে থাকে। নকশা, কাঠের ধরন ও আকারভেদে ঘরের দাম ২ লাখ থেকে ৩৫ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঘরগুলো তৈরি করার জন্য মিস্ত্রিরা আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। অনেক মিস্ত্রি ঘর তৈরিতে সুবিধার জন্য ৪-৫ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জেই বসবাস করছেন। প্রকারভেদে ঘরগুলো তৈরিতে তাদের মজুরি হয় ৩৫-৬০ হাজার টাকা। ঘর তৈরিতে বাচালু, নাইজেরিয়া, শাল, সেগুন, ওকান ও লোহা জাতীয় কাঠ এবং উন্নত মানের ‘অরজিনাল প্লেন শিট ও ঢেউটিন’ ব্যবহার করা হয়। ঘরগুলো তৈরির জন্য কাঠ আনা হয় চট্টগ্রাম থেকে। লৌহজং উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঠের ঘরের হাট ঘোড়দৌড় কাঠপট্টি। এখানে শত বছর ধরে ঘর বিক্রি হচ্ছে। লৌহজংয়ে শতাধিক কাঠের দোকান আছে।  অনেকে এসব দোকান থেকে কাঠ কিনে নিজেদের মতো ঘর তৈরি করেন, আবার অনেকে তৈরি ঘর কিনে নিয়ে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর