শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৈসাবির পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু

বৈসাবির পাহাড়

বৈসাবি অর্থাৎ বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে থাকে। যেমন চাকমা-বিজু, মারমা-সাংগ্রাইং, ত্রিপুরা-বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা-বিষু আর অহমিয়ারা-বিহু বলে পালন করে। ভিন্ন নামে ভিন্ন আঙ্গিকে রঙিন করা হয় বৈসাবিকে।  আর এ বৈসাবি উৎসব শুরু হয় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে...

 

‘টুরু টুরু বাজি র-অ, বাজি বাজেত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেড়েবং বেক্কুন মিলিনেই, ইচ্ছা বিজু, ইচ্ছা বিজু’ (টুরু টুরু বাঁশির সুর, বাঁশি বাজছে, পাড়ায় বেড়াব সবাই মিলে আজ বিজু, আজ বিজু)। এটি চাকমা সম্প্রদায়ের বৈসাবি উৎসবের প্রিয় একটি গান। সারা বছর অপেক্ষার পর বৈসাবি আসলেই পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এ গানের তালে তালে উৎসবে মেতে ওঠে।

বৈসাবি উৎসব : পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ক্ষুদ্র ১১টি নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব রীতিনীতিতে পালন করে বৈসাবি। তবে চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়ারা একই রকমভাবে বৈসাবি পালন করে থাকেন। তবে মারমা ও রাখাইন এ বৈসাবিকে পালন করে ভিন্নভাবে। মূলত বৈসাবিকে চারটি অংশে পালন করে থাকে নৃ-গোষ্ঠীরা। ফুলবিজু, মূলবিজু, বৈসাবি কিংবা বৈশাখ ও জলকেলি।

ফুলবিজু : বৈসাবির আকর্ষণ ফুলবিজু। ফুলবিজুর দিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে নদীতে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গাদেবির উদ্দেশ্যে পূজা দেয়। এ পূজার মধ্যদিয়ে প্রার্থনা করা হয় সারা বছরের অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার। জগতের সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনা করা হয়। এর পর শুরু হয় বৃদ্ধা ¯œান। বয়োজ্যেষ্ঠদের ¯œান করিয়ে দান করা হয় নতুন বস্ত্র। এ ছাড়া ফুল বিনিময় করে ভালোবাসা অর্থাৎ কোচপানা আদান-প্রদান করা হয়। এরপর দিন শুরু হয় মূলবিজুর আনুষ্ঠানিকতা।

মূলবিজু : মূলবিজু হচ্ছে বিজুর বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা। অনেকটা মুসলিমদের ঈদের মতো। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা নতুন বস্ত্র পরিধান করে ঘুরে বেড়ায় পাড়ায় পাড়ায়। নাচে গেয়ে মাতিয়ে তোলে পাহাড়ি পল্লী। সন্ধ্যায় চলে গেঙ্গুলি গানের আসর। এ আসরের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে দৌচুয়ানি। অর্থাৎ বিশেষ পানিও। নিজেদের ঘরে তৈরি দৌচুয়ানি পান করে উৎসবকে রঙিন করে নৃ-গোষ্ঠীরা। ফুলবিজু আর মূলবিজুর ইতি টানে বৈসাবি কিংবা পহেলা বৈশাখ।

বৈসাবি ও পহেলা বৈশাখ : নতুন বছরকে বরণ আর পুরো বছরকে বিদায় জানাতে বাঙালিদের পাশাপাশি নানা আয়োজন করে নৃ-গোষ্ঠীরাও। বাঙালির সাজে বের করা হয় আনন্দ র‌্যালি। বসানো হয় নাজ গানের আসর। আয়োজন করা হয় পিঠাপুলির। ভালোবাসা বিনিময় আর মন্দির বিহারে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করা হয় পহেলা বৈশাখকে। এ দিন একই সঙ্গে পালন করে নৃ-গোষ্ঠী গোজ্যাপোজ্যা উৎসব। জলকেলি অর্থাৎ সাংগ্রাইং : মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাইং অর্থাৎ জলকেলি। মারমা ও রাখাইন জনগোষ্ঠীরা বিশ্বাস করে জল পবিত্র। তাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে। ফুলবিজু, মূলবিজু ও বৈশাখের পর টানা তিন দিন পালন করে এ সাংগ্রাইং উৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর