শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশি দুই নারী

♦ ‘লাইফ সায়েন্সে’ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তালিকায় উঠে আসে সেঁজুতি সাহার নাম ♦ ‘সাস্টেইন্যাবিলিটি’ খাতে অবদানের জন্য তালিকায় স্থান পান ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী

শনিবারের সকাল ডেস্ক

এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশি দুই নারী

এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই নারী। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’ এ তালিকা তৈরি করেছে। ওই দুই বিজ্ঞানী হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ও অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখা গবেষক ও আবিষ্কারকরা এই সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় রয়েছেন।

এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘এশিয়ার গবেষকরা তাদের বড় স্বপ্ন নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে চলেছেন।

নিজেদের টিমের সহায়তায় অযাচিত বাধার দেয়াল সরিয়ে এই বিজয়ীরা বিশাল সাফল্য লাভ করেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ‘সাস্টেইন্যাবিলিটি’ খাতে অবদানের জন্য এ মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ থেকে পিএইচডি করেছেন গাউসিয়া। তিনি আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের বোর্ড সদস্য। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির একটি গবেষণা দলেও কাজ করেছেন গাউসিয়া।

জলজ বাস্তুতন্ত্র ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসেভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন।

মাছ ধরার পরিত্যক্ত জাল কীভাবে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, সেটি শেখানোর মাধ্যমে তিনি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছেন, যার মাধ্যমে ওই নারীদের আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি হচ্ছে।

এদিকে, সেঁজুতি সাহা একজন অণুজীব বিজ্ঞানী। ‘লাইফ সায়েন্সে’ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ তালিকায় স্থান লাভ করেছেন। আণবিক জিনতত্ত্বের এ গবেষক বর্তমানে অলাভজনক চাইল্ড হেলথ রিসার্স ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। সেঁজুতি সাহা ও তার প্রতিষ্ঠান সিএইচআরএফ বাংলাদেশের রোগীদের নমুনা থেকে নতুন করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করেন। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণায় সমতা লাভে অন্যতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ভূমিকা রাখছেন সেঁজুতি সাহা। চিকুনগুনিয়ার মতো যেসব ভাইরাস শিশুদের ভোগাতে পারে তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন সেঁজুতি। এর আগে বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট তাদের ওয়েবসাইটে বিশ্বের ১০ বিজ্ঞানীর প্রোফাইল প্রকাশ করে। প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি বিজ্ঞানী হিসেবে ওই তালিকায় ঠাঁই পান বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। সেখানে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা নিয়ে সমতার পক্ষে এক জোরদার কণ্ঠস্বর সেঁজুতি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজের ও দেশের নাম উজ্জ্বল করা বিজ্ঞানী তিনি।

একই সঙ্গে তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো নারীর অনুপ্রেরণা। যাকে নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয় বিল গেটস জার্নালে। সেঁজুতি সাহার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার বাবা বাংলাদেশের আরেক প্রসিদ্ধ অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর সাহা। তার মা ড. সেতারুন্নাহার গণস্বাস্থ্যের গবেষক। সেঁজুতির একমাত্র ছোট ভাইও পেশায় অণুজীব বিজ্ঞানী।

বাংলাদেশ থেকে ও লেভেল শেষ করে ২০০৫ সালে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হন সেঁজুতি। জৈব রসায়নে স্নাতক শেষ করে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আণবিক জিনতত্ত্বে পিএইচডি করেন।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের উইমেন অব ইন্সপিরেশন অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এবং ওয়েবি অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অন্যতম। ২০২০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল পোলিও ইরেডিকেশন ইনিশিয়েটিভের টিআইএমবির মেম্বার নিযুক্ত হন তিনি।

 ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞানীদের পরিচয় এবং তাদের গবেষণার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিজ্ঞানীরা ওই ১০০ জনের তালিকায় রয়েছেন। ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’ সাময়িকী ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর এশিয়ার শীর্ষ শত বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে আসছে।

সর্বশেষ খবর