শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
দেশের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার আদিবাসী

শিক্ষার আলোয় আলোকিত ‘কড়া’ সম্প্রদায়

দিনাজপুর প্রতিনিধি

শিক্ষার আলোয় আলোকিত ‘কড়া’ সম্প্রদায়

বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ‘কড়া সম্প্রদায়’। পারিপার্শিক অন্য ভাষার প্রভাবে তাদের কড়া ভাষা আজ হারানোর পথে। আর ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তির পথে এই সম্প্রদায়ের মানুষ। এর মাঝেও বিভিন্ন সংগঠন আর সরকারি সহযোগিতায় তারা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এক সময় আদিবাসী কড়া সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও এখন অনেকটাই ভালো আছে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে শুরু করেছে এসব পরিবার। কড়াদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নতি হয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির।

দেশের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার আদিবাসী জনগোষ্ঠী দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাণীপুকুর ইউপির হালজা মৌজার ঝিনাইকুড়িতে কড়া সম্প্রদায়ের ১৭টি পরিবার এখন বেড়ে হয়েছে ২৪ পরিবারে এবং দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা এলাকায় দুটি পরিবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনে। আর এসব পরিবারের এখন সদস্য সংখ্যা মাত্র ১০৮ জন।

বিরলের কড়াপল্লীতে কৃষ্ণ কড়া নবম শ্রেণি পাস ছাড়া আর এই জনগোষ্ঠীর কারও কোনো অক্ষরজ্ঞান ছিল না। এখন অনেকেই নাম লিখতে পারেন। প্রতিটি পরিবারের শিশুরা এখন লেখাপড়া করছে। এই কড়াপল্লীর লাপোল কড়া নামের এক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে লেখাপড়া করছেন। তার প্রচেষ্টায় এই কড়াপল্লীতে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে কড়া পাঠশালা। কড়া শিশুদের শিক্ষা সহায়ক হিসেবে কাজ করছে এই কড়া পাঠশালা। ফলে এসব কড়া পরিবারে আর ঝরেপড়া শিশু নেই বললেই চলে। দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের তিনটি কড়া পরিবারের সদস্যরাও এই সুবিধা পাচ্ছে।

পাঠশালার দুই শিক্ষক তিথি ওঁরাও এবং বিচলি ওঁরাও। ২ জুলাই ঝিনাইকুড়ি গ্রামের কড়াপল্লীতে এই পাঠশালা পাকা ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ‘কড়া’র শিশুদের জন্য গড়ে তোলা এই পাঠশালা ভবনের উদ্বোধন করে আরেক শিশু অপার সর্বজয়া নূর।

এদিকে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে করে দেওয়া হয়েছে পাকা ঘরবাড়ি। এ ছাড়া পাকা রাস্তাসহ ঘরে ঘরে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্যদিকে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে তারা ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বেহাত হওয়া অনেক সম্পত্তি। এই সম্পত্তি আবাদ করে কয়েকটি পরিবার এখন সচ্ছল হতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা কড়া পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক মুক্তি ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য করে দিয়েছে আয়বর্ধক কর্মসূচি হাঁস-মুরগি ও পশুপালন খামার সমবায়ী জনসংগঠন। এ ছাড়া তাদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ। কড়াদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নতি হয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির। এখন একটু অবসর পেলেই তারা মাদল টোমাকের বাজনায় নারী-পুরুষ গেয়ে ওঠে ‘খোঁচ লাগ্গাল শেড়িয়া, মাহা সুন্দার গেলিয়া’ এমন তাদের ভাষায় ঝুমুর গান ও সেইসঙ্গে নাচও।

৪ জুলাই কড়াপল্লীর বাস্তব চিত্রে দেখা যায়, কড়াপল্লীর মাহাতো (পাড়াপ্রধান) জগেন কড়া ও একই পল্লীর কিনা কড়া অন্যদের সঙ্গে নিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চা করছেন। এ সময় দেখা হয়, ভাষা নিয়ে গবেষণা শুরু করা তানজির তনয় এবং তার সহযোগী সাবরিনা সায়লার সঙ্গে। তারা জানান, তারা কড়াদের ভাষা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন।

কড়াপল্লীর মাহাতো (পাড়াপ্রধান) জগেন কড়া, কিনা কড়া, রঞ্জন কড়া, কলো কড়া, কৃষ্ণ কড়াসহ অনেকে জানান, এখন তারা অনেকটাই ভালো আছেন।

সর্বশেষ খবর