শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুগ্ধতা ছড়ানো সবুজ কলোনি

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

মুগ্ধতা ছড়ানো সবুজ কলোনি

সড়কের দুই পাশে বাহারি সবুজ গাছ, ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে হরেক রঙের ফুল। ইট-পাথরের দেয়ালে দেয়ালে ছেয়ে থাকা সবুজে পুরো এলাকা সেজেছে ভিন্ন রূপে। এটি ময়মনসিংহ নগরীর একটি কলোনির চিত্র। অথচ কদিন আগেও কলোনির সড়কজুড়ে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনায় চলাচল করাই ছিল দায়। তবে বাসিন্দাদের ছোট্ট এক উদ্যোগে কলোনিটি পেয়েছে সবুজ কলোনির তকমা।

ময়মনসিংহ নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকার নাম বাঁশবাড়ি কলোনি। এখানে যারা বাস করে তারা প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সম্প্রতি কলোনির ভিতরের ভাঙা সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও এলইডি সড়কবাতি স্থাপন করেছে সিটি করপোরেশন। এতে নোংরা সড়ক ও ড্রেন হয়েছে ঝকঝকে। সেইসঙ্গে এলাকা হয়েছে আলোকিত। এরপর সেই পরিচ্ছন্নতা টিকিয়ে রাখতে সড়কের ১ হাজার ফুট এলাকাজুড়ে দেয়ালগুলোতে সবুজায়নের পরিকল্পনা করেন কয়েকজন বাসিন্দা। অবশ্য তাদের মধ্যে মুরাদ হাসান কানন তিন বছর আগেই তার বাসায় সবুজায়ন করেন। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হন মেহেদী হাসান মুহিত, সাইফুল ইসলাম ও উত্তম সরকার। কলোনির বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেন তারা। তাদের সেই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়ে একাত্ম হন বাকিরাও। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশের দেয়াল ছেয়ে গেছে সবুজে। বাড়ির নষ্ট ও ভাঙা ঝুড়ি, বালতি, মগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে রশি বা তার দিয়ে দেয়ালে আটকে বানানো হয়েছে টব। লাগানো হয়েছে হরেক প্রজাতির গাছ। এখন আর আগের মতো আবর্জনার তীব্র গন্ধ নেই। পুরো এলাকা ম ম করে ফুলের সুবাসে। অনেকেই দেখতে আসছে কলোনির পরিবেশ। বাসিন্দারা জানান, গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ছোট-বড় সবাই খুব উদ্যোগী। সবাই বাগানকে বড় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। স্থানীয় বেদেনা আক্তার বলেন, আগে রাস্তাও ভালো ছিল না, আবার দুই পাশে সবাই আবর্জনা ফেলত। এখন রাস্তাও সুন্দর হয়েছে এবং দেয়ালগুলোতে গাছ লাগিয়ে সুন্দর করা হয়েছে। এতে কলোনির চেহারাই পাল্টে গেছে।

চরপাড়া এলাকা থেকে ঘুরতে আসা শামসুন্নাহার নামে এক নারী বলেন, আগে যখন এদিকে আসতাম তখন এটিকে কলোনিই মনে হয়েছে কিন্তু এখন এটিকে কলোনি ভাবারই সুযোগ নেই। ফেসবুকে বদলে যাওয়া বাঁশবাড়ি কলোনি দেখে মেয়েকে নিয়ে দেখতে এসে ছবিও তুলেছি। এমন চিত্র দেখে ভালোই লাগছে।

উদ্যোক্তাদের একজন মুরাদ হোসেন কানন বলেন, কলোনি নিয়ে মানুষের ধারণা পাল্টে দিতে আগামী প্রজন্মকে সুন্দর নগরী উপহার দিতে এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গাছ ঝুলছে দেয়ালে দেয়ালে। অনুপ্রাণিত হয়ে প্রত্যেকেই এখন গাছ কিনে এনে ঘরের সামনে ও সড়কে লাগাচ্ছেন। উত্তম সরকার নামে আরেকজন বলেন, ইচ্ছে থাকলেই একটি কলোনির চিত্র পাল্টে দেওয়া যায় এটিই তার প্রমাণ। নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে বেড়ে উঠবে। তারাও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।

বাসিন্দাদের সমর্থন ও অনুপ্রাণিত করতে কলোনিটি ঘুরে গেছেন সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, এলাকার কয়েকজন যুবক কলোনির সড়কের দুই পাশের দেয়ালগুলোকে বাগানে রূপ দিয়েছেন। এটি শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয়।

সর্বশেষ খবর