শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চায়ের দেশে চা জাদুঘর

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

চায়ের দেশে চা জাদুঘর

চা জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চা বাগানের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো দেখি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এসব পুরনো জিনিস  একসময় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

 

চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠেছে চা জাদুঘর। শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়কে টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামে বাংলাদেশের চা-শিল্পের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে। জাদুঘরটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে যে কেউ এ জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন।

২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এ চা জাদুঘরটির যাত্রা শুরু হয়। চারটি কক্ষে সাজিয়ে রাখা হয় চা বাগানের দেড় শ বছরের ইতিহাস। প্রতিদিন শ্রীমঙ্গলে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটক ছাড়া স্থানীয়রাও চা জাদুঘর ঘুরে দেখছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চারটি কক্ষে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রথম কক্ষে বড় একটি অংশজুড়ে রাখা হয়েছে একটি টেবিল ও চেয়ার। ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন চা-বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি এ চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করেছিলেন। দেয়ালে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। প্রথম কক্ষের ভিতর দিয়ে ঢুকতে হয় দ্বিতীয় কক্ষে। সেখানে চা-গাছের গুঁড়া দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে রাখা হয়েছে। রয়েছে চা-বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কাঁটা কোদাল, রিং কোদাল, চা-গাছ ছাঁটাই কাজে ববহৃত কলম দা সহ ব্রিটিশ আমলে শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার। রয়েছে লোহার পাপোশ, চা-শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ রুপা ও তামার মুদ্রা। ঘটি, টেবিল, ব্রিটিশ সাহেবদের গুনতির কাজে ব্যবহৃত হাড়ের ছড়ি ও লাঠি। শ্রমিকদের পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত প্লেট। বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় ব্যবহৃত প্রাচীন বেতারযন্ত্র। দেয়ালঘড়ি, চা-বাগানে চারা লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্র। দেয়ালের শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চা বোর্ডের সাবেক উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদের দেওয়া বিভিন্ন সময়ের আধুনিক কলম। জাদুঘরের তৃতীয় কক্ষে রাখা হয়েছে আগেরকার দিনের কেরোসিনচালিত ফ্রিজ, গাড়ির চেসিস, বৈদ্যুতিক পাখা, ট্রাক্টরের লাঙলের অংশ। বাগান পাহারার কাজে নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহৃত তীর-ধনুক, দিকনির্ণয় যন্ত্র। চা-বোর্ডের হিসাবরক্ষকের ব্যবহৃত টাকা রাখার বাক্সসহ টেবিল। রয়েছে বাংলাদেশ চা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম কম্পিউটার ও টাইপ রাইটার। জাদুঘরের চতুর্থ কক্ষে রয়েছে চা তৈরির যন্ত্রপাতিসহ কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত আসবাব। দেয়ালে টানিয়ে রাখা হয়েছে ব্রিটিশ আমলের চায়ের বিজ্ঞাপন।

চা জাদুঘরের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, ছুটির দিনে প্রায় ৩০-৪০ জন জাদুঘরে আসেন। এ ছাড়া টি রিসোর্টের গেস্ট যারা আসেন তারা অনেকেই এ জাদুঘর দেখে যান।

চা জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে চা বাগানের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো দেখি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এসব পুরনো জিনিস একসময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগামী প্রজন্ম এসব দেখতে পাবে না। এ বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই আমরা এ চা জাদুঘরটি করি। এখন চারটি কক্ষ নিয়ে করেছি। ভবিষ্যৎ জাদুঘরটি বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আরও অনেক জিনিসপত্র সংগ্রহ করছি।’

সর্বশেষ খবর