শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাহাড়ে মরুভূমির খেজুর চাষ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

পাহাড়ে মরুভূমির খেজুর চাষ

বাণিজ্যিক চাষ শুরু করার তিন বছরের মাথায় ২০২২ সালে প্রথম সফলতা পান এই কৃষক। দেশের মাটিতেই মরুভূমির খেজুরের স্বাদ গ্রহণ করেন। প্রথম বছরেই লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করে স্বপ্নের ভিত মজবুত করেন। চলতি বছর ২ লাখ টাকার বেশি খেজুর বিক্রির আশা করছেন তিনি

 

পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে মরুভূমির খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন এক স্বপ্নবাজ কৃষক। পাহাড়ি জনপদে চাষ শুরু হওয়া খেজুরের আকার ও স্বাদ মরুভূমির খেজুরকেও ছাড়িয়ে যাবে দাবি এ কৃষকের।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রসুলপুর গ্রামের গভীর অরণ্য ভেদ করে বিশালাকার টিলা ভূমিতে স্বপ্নের খেজুর চাষ শুরু করেন মো. নুরুল আলম।

খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করার তিন বছরের মাথায় ২০২২ সালে খেজুর চাষে প্রথম সফলতা পান এ কৃষক। দেশের মাটিতেই মরুভূমির খেজুরের স্বাদ গ্রহণ করেন। প্রথম বছরেই লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করে স্বপ্নের ভিতকে মজবুত করেন। চলতি বছর ২ লাখ টাকারও বেশি খেজুর বিক্রির আশা করেন তিনি। সম্প্রতি রসুলপুর এলাকায় মো. নুরুল আলমে স্বপ্নেঘেরা খেজুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মরুভূমির খেজুর। হলদে-সবুজ আর লালছে রঙের খেজুরগুলো শোভা পাচ্ছে বাগানে। প্যাকেটে মোড়ানো খেজুর দেখতেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির খেজুর চাষের খবরে তার বাগানে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘ বছর ধরে আইটি সেক্টরে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে কাজ করা মো. নুরুল আলমের নিবাস ঢাকার শ্যামলীতে। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক মো. নুরুল আলম আত্মীয়তার সম্পর্কের সূত্র ধরে পাহাড়ে বেড়াতে এসে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যান।

বাগান মালিক মো. নুরুল আলম জানান, কৃষি বিষয়ক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই কৃষি সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সে আগ্রহ থেকেই ২০১৯ সালের দিকে সবুজ পাহাড়ের ১৩ একর টিলাভূমি ক্রয় করেন। এরপরই শুরু করেন স্বপ্নের কৃষি বাগান গড়ে তোলা। তার তিন বছর বয়সী বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় শ্রমিকদের। এখানে গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। বাগানের পানির প্রয়োজনীয়তা মিটাতে সাড়ে ৬ হাজার ওয়াটের সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছেন এ উদ্যোক্তা। যা দিয়ে বাগানে পানির সমস্যা সমাধান হচ্ছে। শতভাগ আমদানিনির্ভর খেজুরের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশের মানুষের খেজুরের চাহিদা পূরণ করাই তার লক্ষ্য। শিক্ষিত যুবকদের কৃষি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমদানিনির্ভর ফলের চাষ করতে পারলে দেশের অর্থ বাঁচবে। তিনি মনে করেন, যেসব কৃষি ফল হারবেস্ট করার পরও মাসাধিককাল সংরক্ষণ করা যায় সেসব ফলের চাষ করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরব ও ইংল্যান্ড থেকে ১০০টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ি পরিত্যক্ত টিলাভূমিতে খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রথম বারের মতো ২৪টি গাছে ফলন দিয়েছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে তার সব গাছে ফলন আসবে। এমনটাই জানিয়েছেন এ স্বপ্নবাজ চাষি। বারোহি, আজওয়া, মিটজল ও আম্বার জাতের খেজুরের জাত রয়েছে তাতে প্রায় অর্ধেক গাছেই ইতোমধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে। আগামী দেড় দুই বছরের মধ্যে বাকি গাছে ফল ধরতে শুরু করবে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর