শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝরা ধানে বাম্পার ফলন

পতিত জমিতে চাষ ও সেচ ছাড়াই বিঘাপ্রতি ২০ মণ ধান উৎপাদন

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ঝরা ধানে বাম্পার ফলন

জমিতে কোনো ধরনের চাষ ও সেচ ছাড়াই এবার বোরো মৌসুমের ঝরা ধানে বাম্পার ফলন পেয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার চাষিরা। অসময়ে পতিত জমিতে এই ধান চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। বোরো মৌসুমে পাকা ধান কাটার পর মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ধান থেকে প্রাকৃতিকভাবে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ধানের চারা গজায়। এরপর জমিতে নিড়ানি দিয়ে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে ধান গাছ দ্রুত বড় হয়।

এরই মধ্যে রূপসার জাবুসা বিলে চাষ ও সেচ ছাড়াই ঝরা পদ্ধতিতে বিরি ধান ৯৯, বিরি ধান ৬৭, বিরি ধান ৯২-এর বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক সুলতানুর রহমান। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সফলতাকে কাজে লাগিয়ে আউশ মৌসুমে পতিত জমিতে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা গেলে লাভবান হবেন চাষিরা।

জানা যায়, সুলতানুর রহমান ২০২২ সালে ছোট পরিসরে পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক ঝরা ধানের আবাদ করেন। শুরুতে কিছুটা সাফল্য পাওয়ায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন তিনি। চলতি বছরে স্থানীয় কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধায়নে প্রায় ১০ একর জমিতে ঝরা পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। আর তাতেই মিলেছে অবিশ্বাস্য সাফল্য।

পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে পতিত জমিতে পড়ে থাকা ধানের বীজ থেকে ধানের চারা গজানোর পর তিনি বাকি জমিতেও ১০০ কেজির মতো ধান ছড়িয়ে দেন। বৃষ্টির পানিতে চারা একটু বড় হওয়ার পর লোকজন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দেন। চারা আরও বড় হলে পাঁচ-ছয় বস্তা ইউরিয়া প্রয়োগ করেন। চলতি ভাদ্র-আশ্বিনে তিনি ধান পেয়েছেন ৩৫০ মণ। যার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে চার মাসে পতিত জমিতে তার আয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

সুলতানুর রহমান বলেন, বোরো মৌসুমের পর এই জমি পতিত পড়ে থাকে। এবার বোরো মৌসুমে ৩ লাখ টাকা খরচ করে তিনি ধান পেয়েছিলেন ৫০০ মণ। যা বিক্রি করেছেন ৫ লাখ টাকায়। লাভ প্রায় ২ লাখ টাকা। এবার আউশ মৌসুমে ঝরা ধানের উৎপাদন কিছুটা কম হলেও বিনা খরচে তিনি সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার ধান পেয়েছেন। এদিকে পতিত জমিতে বিনা চাষে ঝরা ধানের সফলতা পাওয়ায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আশপাশের চাষিরাও। তারা বলছেন, বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতে গেলে বীজতলা তৈরি থেকে ধান রোপণ পর্যন্ত প্রচুর টাকা খরচ হয়। সেখানে সেচ, নিড়ানি ও সার দিতে হয়। কিন্তু বর্ষার সময় বিনা চাষ ও বিনা সেচে এভাবে ধানের বাম্পার ফলন দেখা যায়নি। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান জানান, বিরি ধান ৯৯, বিরি ধান ৬৭ ও বিরি ধান ৯২ মূলত বোরো মৌসুমের ফসল। যা এবার আউশ মৌসুমে বিনা চাষে বাম্পার ফলন দিয়েছে। তিনি বলেন, বোরো মৌসুমের পর আমন-আউশ মৌসুমে বিলে  বিঘার পর বিঘা জমি পতিত থাকে। কৃষক এবার আউশ মৌসুমে ঝরা পদ্ধতিতে ধান চাষের নতুন মাইল ফলক অর্জন করেছে। যা নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।  এতে আশপাশের কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আগামীতে একই পদ্ধতিতে আউশ মৌসুমে চাষাবাদ করলে পতিত জমিতে সোনা ফলানো সম্ভব।

সর্বশেষ খবর