শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হস্তশিল্পের নান্দনিক পণ্যের বিশ্বজয়

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

হস্তশিল্পের নান্দনিক পণ্যের বিশ্বজয়
গোপিনাথপুর গ্রামের ৫ থেকে ৬ শতাধিক নারী খড় ও খেজুর পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী। তাদের তৈরি এসব পণ্য এখন বিশ্ববাজার দখল করেছে। খেজুর পাতা ও খড়ের তৈরি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ২৫-৩০টি দেশে রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে

সাতক্ষীরার খেজুরের পাতা, কাশফুলের গাছ ও খড় দিয়ে তৈরি পণ্য যেন বিশ্বজয় করেছে। সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে সাতক্ষীরার গোপিনাথপুর গ্রামের নারীদের হাতের তৈরি বিভিন্ন খড় ও খেজুরের পাতার নান্দনিক বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পেরু, স্পেনসহ আমেরিকার অন্তত ২০ থেকে ২৫টি দেশে। এসব পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শপিং বাস্কেট, রাউন্ড বাস্কেট, শ্রাবণী ঢাকনা বাস্কেট, স্কয়ার বাস্কেট, মিনি বাস্কেট, বালতি, সোর্ড, ওয়েস্ট বাস্কেট, মিরা, ডালি, টেবিলম্যাট ও রাউন্ডম্যাট। সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল নারীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন এসব দৃষ্টিনন্দন পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে তা দুই দশক ধরে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছে। বছরে সাতক্ষীরা থেকে ২৮ থেকে ৩০ কনটেইনার খড় ও খেজুর পাতার পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হচ্ছে। যার আনুমানিক রপ্তানি মূল্য ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকা। এতে দেশে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে গোপিনাথপুরসহ জেলার অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি খড় আর খেজুর পাতা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে আসছেন। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত গোপিনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ মিনতি রানী সরকার, রিক্তা সরকার, সন্ধ্যা রানী সরকার জানান, তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত ও বিল্ডিং বাড়ির শোভাবর্ধনের জন্য এখানকার খড় এবং খেজুর পাতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ১০ থেকে ১৫ প্রকারের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। এতে তাদের সাংসারিক কাজের বাইরে মাসে প্রতিটি পরিবার ৭-৮ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকে। তাদের উৎপাদিত এসব পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকে যে অর্থ পান তাতে তাদের ভালোভাবে সংসার চলে যায়। সাতক্ষীরা জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ কে এম শফিউল আযম জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বী করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে সাতক্ষীরায়। গোপিনাথপুর গ্রামের ৫ থেকে ৬ শতাধিক নারী খড় ও খেজুর পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী। তাদের তৈরি এসব পণ্য এখন বিশ্ববাজার দখল করে নিয়েছে। খেজুর পাতা ও খড়ের তৈরি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ২৫-৩০টি দেশে রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বিশেষ করে গোপিনাথপুরের নারীরা তাদের সাংসারিক কাজকর্ম সামলেও এই হস্তশিল্পের মাধ্যমে একেকজন নারী ৭-৮ হাজার টাকা আয় করছেন। সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুন্সি খায়রুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় নারীদের কাছ থেকে শৈল্পিক বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি খড় ও খেজুর গাছের পাতার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করেন। যার বাজার মূল্য ২৫-২৬ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর