শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাবির মোড়ে ভোজনরসিকদের ভিড়

মো. রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ভাবির মোড়ে ভোজনরসিকদের ভিড়

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা ভাবির মোড়। ভাবির মোড়ের নাম শুনলে অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে। ওই এলাকার প্রকৃত নাম রানীর ঘাট। পাশ দিয়ে বহমান টাঙ্গন নদ ও রাবার ড্যাম। নদ পার হলেই ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ। নদের ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণের সময় নামবিহীন একটি ছোট্ট খাবার হোটেল হয়। স্থানীয় লোকজন মালিককে ভাবি বলেই সম্বোধন করতেন। ভালো ব্যবসা হলে আরও কয়েকজন নারী হোটেল দেন। নারী পরিচালিত হোটেলের রান্না সবার পছন্দ হওয়ায় এলাকাটির নাম পরিবর্তন হয়ে মানুষের মুখে ভাবির মোড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভোজনবিলাসীদের আনাগোনায় এখানে কয়েকজন নারী হোটেল করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ঘরোয়া পরিবেশে ভাবিদের হাতের তৈরি মজাদার হাঁসের মাংসের রান্নার খবর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে সপরিবারেও আসছেন। হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার খাবারের প্যাকেজ। যেমন ইচ্ছা ভাত, হাঁসের মাংস ও বিভিন্ন প্রকার সালাদ, শাকসবজি এবং নানান রকমের ভর্তা খেতে পারেন। এখানে প্রতিদিন গড়ে ২ শতাধিক হাঁস রান্না করা হয়। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে যেতে হয় গহিন গ্রামের ভাবির মোড় এলাকায়। সুস্বাদু হাঁসের মাংসের জন্য বিখ্যাত ভাবির মোড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দল বেঁধে ছুটে আসছেন খাদ্যপ্রেমীরা। এই রানীর ঘাট টাঙ্গন নদের ওপর রাবার ড্যাম দর্শনার্থীদের জন্য একটি প্রিয় দর্শনীয় এলাকায় পরিণত হয়েছে। নদের রাবার ড্যামের পাশেই সারিবদ্ধভাবে চোখে পড়বে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ। সেতু পার হলেই চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ভ্রমণপিপাসুদের চোখ জুড়াবে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। প্রকৃতির পাশাপাশি ঘরোয়া পরিবেশে খাবারও এসব দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে।

ভাবির মোড়ে প্রথম দিকে এক থেকে তিনটি হোটেল থাকলেও বর্তমানে এখানে সাতজন ভাবি সাতটি হোটেল করেছেন একই নামে। হোটেলে নেই কোনো পুরুষ কর্মচারী, খাবার পরিবেশন করা, ক্যাশে টাকা নেওয়াসহ সব কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। হোটেল ব্যবসা করে ‘ভাবিরা’ হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। কুলসুমা, তাসলিমা, মাসতারা, মেরিনা, রাজিয়া, বেলি, লিপি নামে সাতজন নারী হোটেল দিয়েছেন। যারা লোকমুখে ভাবি বলেই সমাদৃত। প্রায় ২৫ বছর আগে টাঙ্গন নদের ঘাটে শুকনো মৌসুমে উত্তোলন হতো বালু। প্রতিদিন এই ঘাটে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাক্টর দিয়ে শ্রমিকরা বালু উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে রানীর ঘাটে ছিল না তখন কোনো চা-নাস্তার দোকান। জীবিকার তাগিদে তখন প্রথম জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মাসতারা বেগম একটি চায়ের দোকান দেন। ঘাটের রাস্তাটি ছিল কাঁচা। পরবর্তী সময়ে রাস্তাটি পাকা করার কাজ শুরু হয়। রাস্তার শ্রমিকদের জন্য তাঁর ছোট হোটেলে শুরু হয় ভাত বিক্রি। শ্রমিকদের অনুরোধে প্রথমে রান্না করেন একটি হাঁসের মাংস। তাঁর হাতের রান্না খেয়ে মুগ্ধ তাঁরা। এরপর থেকে শুরু হাঁসের মাংস বিক্রি। অল্প দিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে মাসতারা বেগমের সুস্বাদু হাঁসের মাংস রান্নার খবর। পরে তাঁকে দেখে আরও তিন ভাবি হাঁসের মাংসের হোটেল দেন। মূলত তখন থেকে হোটেলগুলোর নাম হয় ভাবির হোটেল। এখানে দৈনিক গড় বিক্রি ২ লাখ টাকারও বেশি। মাসে এসব দোকানের গড় বিক্রি ৭০ লাখ টাকা। তবে সরকারি ছুটির দিনে বিক্রি আরও বেশি হয়।

সর্বশেষ খবর