আইসিটির প্রসার ঘটছে দিনাজপুরসহ সারা দেশেই। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচতে স্বাধীনভাবে আয়ের পথ খুঁজে অনেকেই আইসিটিনির্ভর ক্যারিয়ার গঠনের চেষ্টা করছেন। কেউবা হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। আবার অনেকে নিজের দক্ষতায় হচ্ছেন সফলও। তেমনি এক সফল ফ্রিল্যান্সার জীবন কুমার রায়। দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ট্রাক শ্রমিক থেকে এখন লাখপতি। তার সফলতা দেখে আরও অনেক বেকার এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউপির তালপুকুর এলাকার পূর্ণ চন্দ্র রায়ের ছেলে জীবন কুমার রায়। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। এসএসসি পাস করার পর ২০১৭ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে রংপুর টিএমএস পলিটেকনিকে ভর্তি হন। এ সময় পরিবারে চলছিল দুর্দিন। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার খাওয়া ছিল কষ্টকর। পড়ালেখা করা তো আরও কষ্টকর। জীবন বাঁচাতে জীবন কুমার রাজমিস্ত্রির শ্রমিক আবার কখনো ট্রাকের হেলপারের কাজ করেন। কাজ করে সংসারের পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার খরচও জোগান দেন তিনি। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে ২০২২ সালে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শিখতে কুষ্টিয়ায় গিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখেন তিনি। ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন শেষে তারাই তাকে একটি কম্পিউটার দিয়েছিল কাজ চালানোর জন্য। বাড়িতে ফিরে ওই কম্পিউটারে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। প্রথমবার কিছু টাকা আয় করার পর আরেকটি ল্যাপটপ কিস্তিতে কেনেন। এরপর এলাকায় একটি ছোট্ট অফিস নেন। সেখানেই শুরু করেন ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ। ধীরে ধীরে আয় বাড়তে থাকে। সঙ্গে আরও ১২ জন এ কাজে যোগ দেন। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। বড় বড় প্রজেক্ট পেতে শুরু করেন। দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে। এখন বড় একটি প্রজেক্টের কাজ চলছে। তার সঙ্গে এসব কাজে বিভিন্ন এলাকার ২ শতাধিক তরুণ যুক্ত হয়ে আয় করতে পারছেন। এ কাজের পাশাপাশি নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট থেকেও আয় করছেন তিনি। জীবন কুমার রায় জানান, ফ্রিল্যান্সার হলো ‘মুক্ত পেশাজীবী’। বাড়ি কিংবা যে কোনো স্থানে বসেই কাজ করতে পারেন। প্রয়োজন নিজের দক্ষতা, বিদ্যুৎ আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ। ইচ্ছা, ধৈর্য, দৃঢ় মনোবল থাকলে চাকরির পেছনে না ছুটে ফ্রিল্যান্সিং করে যে কেউ সফলতা পেতে পারেন।
জীবন কুমার রায় আরও জানান, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মতো নিজের ওয়েবসাইটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।