শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা

নয়নাভিরাম চট্টগ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত প্রাচ্যের রানি চট্টগ্রাম। দৃষ্টিনন্দন অপসরীর সমারোহ চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের মতো নদী-সাগর-পাহাড়ের প্রাকৃতিক এমন মিতালী অন্য কোথাও বিরল। এ সৌন্দর্যকে পর্যটন শিল্পের রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে প্রসারিত করা হবে জেলাভিত্তিক পর্যটন খাত। ইতোমধ্যে পর্যটকদের সুবিধার্থে চালু হয়েছে পর্যটক বাস। পর্যটকদের সুবিধায় সংস্কার করা হচ্ছে পতেঙ্গা সি বিচ। নেওয়া হয়েছে পর্যটকবান্ধব নানা উদ্যোগ। প্রশস্ত করা হবে গুলিয়াখালী ও খৈয়াচড়া বিচের সড়ক। তা ছাড়া, প্রাইভেট ট্যুর অপারেটরদের পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার চট্টগ্রাম। এটিকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হয়নি। অথচ ট্যুরিজম দিয়ে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব। এর বড় দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু-বিধ্বস্ত হওয়ার উপক্রম দেশটি কেবল পর্যটন খাত সম্প্রসারণ করে মাত্র দুই বছরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, কিছু প্রক্রিয়াধীন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হবে। এগিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন পর্যটনমুখী। চট্টগ্রাম নদীমাত্রিক হওয়ায় এখানে নদীপথে পর্যটন ব্যবস্থার অপার সম্ভাবনা আছে। তা ছাড়া বর্তমানে জেলাভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনেক প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামে ফয়স লেক, পতেঙ্গা-পারকি ও বাঁশখালী সৈকত, সিআরবি, বাটালি পাহাড়, ইউরোপিয়ান ক্লাব, মাস্টার দা সূর্য সেনের পৈতৃক ভিটা, কর্ণফুলী সেতুসহ অনেক ট্যুরিস্ট স্পট আছে। সেগুলো নিয়ে ট্যুরিজমের চিন্তাভাবনা করতে হবে। এগুলোকে নান্দনিক রূপ দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যায়। একইভাবে চট্টগ্রামে ঐতিহ্য ট্রাইবাল কমিউনিটি, ফিস মার্কেট, টি গার্ডেন নিয়েও ট্যুরিস্টবেজড কাজ করা যায়।

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে পর্যটন : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চালু হচ্ছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটিকে কেন্দ্র করে এখন নদীর দুই পাশ-পতেঙ্গা ও আনোয়ারা এলাকায় নতুন রূপ পেয়েছে। নবসজ্জিত দৃশ্য দেখতে এখন মানুষের ঢল নামে। বঙ্গবন্ধু টানেল অবলোকনে দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছে। তাই পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চারটি এসি বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাসগুলো টানেলকেন্দ্রিক সীমিত সড়কে চলাচল করবে। পর্যায়ক্রমে ডিসি পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত হয়ে আনোয়ারা পারকি সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত চালু করার পরিকল্পনা হতে নেওয়া হয়েছে।

নৌকা মিউজিয়াম : জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফৌজদারহাটে ২৫ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে ডিসি পার্ক। দর্শনার্থীর কাছে সমাদৃতও হয়েছে এটি। ডিসি পার্কের পাশেই তৈরি করা হচ্ছে নৌকা মিউজিয়াম। হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে নৌকাগুলো রয়েছে সেগুলোর স্মৃতি নিয়ে নৌকার সমাহার হবে এ মিউজিয়ামে। নৌকা ছাড়াও এখানে থাকবে বড় আকারের ময়ূরপঙ্খী, বজরা, সাম্পান, বিভিন্ন ধরনের নৌকার রেপ্লিকা। ভবিষ্যতে থ্রিডির মাধ্যমে এগুলোর ফ্যাসিলিটিস রাখার বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চালু হবে রিভার ক্রুজ : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নদীপথকেন্দ্রিক পর্যটন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীতে চালু করবে রিভার ক্রুজ। আগামী এক মাসের মধ্যে রিভার ক্রুজ চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ওয়েস্টার্ন মেরিন ও কর্ণফুলী নামক দুটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেলা প্রশাসক আলোচনা করেছেন। দুই প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজ দেবে। প্রাথমিকভাবে প্রতি শুক্র ও শনিবার কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা এলাকার একটি ঘাট থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত যাতায়াত করবে।

সিটি বেইজ ট্যুরিজম : সিটি বেইজড ট্যুরিজম এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামে ট্যুরিজম বেজড পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে। বিশেষ করে মাজারকেন্দ্রিক ট্যুরিজমকে বিকশিত করা। মাইজভান্ডার দরবার শরিফ, বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) মাজার, আমানত শাহ (রহ.) মাজার, মিসকিন শাহ (রহ.) এর মাজার কেবল চট্টগ্রামে নয়, দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। এসব মাজারের পর্যটন মূল্য আছে। বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে আসে। তা ছাড়া হাটহাজারী-ফটিকছড়িতে টি গার্ডেন। সেখানেও ডে ট্যুর চালু করা যায়।

সর্বশেষ খবর