শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মোবাইল তৈরির কারিগর গ্রামীণ নারীরা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

মোবাইল তৈরির কারিগর গ্রামীণ নারীরা

পিয়ারাতলী। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামের সড়কের অবস্থা নাজুক। তবে ওই গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের নারীদের জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত। কারণ এখানে স্থানীয় উদ্যোগে ধানের জমির পাশে গড়ে উঠেছে মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা। এ হালিমা টেলিকম কারখানার ৯০ ভাগ নারী শ্রমিক। তাদের কারও বাড়ি পিয়ারাতলী, কারও মাঝিগাছা, ছত্রখিল কিংবা চাঁনপুরে। এর উদ্যোক্তা স্থানীয় তরুণ আবুল কালাম হাসান টগর। পিয়ারাতলী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এখানের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশ প্রাইমারির গন্ডি পার হয়েছেন। কেউবা নামটা লিখতে পারেন। সেই নারী এখন মোবাইল ফোনের ডেট লেভেল, এলসিডি, এলসিডি লেন্স, কী প্যাড, আপ হাউজিং, ব্যাক হাউজিং, স্পিকার নেট চেনেন। কাপড়ের পুতুল বানানো তরুণী এখন মোবাইল ফোন তৈরি করছেন।

কারখানায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ। সবুজ মাঠের পাশে ধূসর রঙের ভবন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভিতরে চলছে উৎপাদনের রঙিন কর্মযজ্ঞ। গ্রামীণ নারীরা পরিপাটি অফিস ড্রেস পরে কাজ করছেন। তদারকি করছেন উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগরসহ অন্য কর্মকর্তারা।

‘আমাদের কর্মীরা গ্রামের বলে পিছিয়ে নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানের। আমরা দেশে তৈরি যে কোনো পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছি।’
পিয়ারাতলী গ্রামের সুরাইয়া বেগম বলেন, দেখে বাংলা পড়তে পারি। পরিবারের আয় কম। ঘরের পাশের কারখানায় এসে কাজ শিখেছি। এখন নিজে মোবাইল ফোন বানাতে পারি, এটা এখন অনেকটা পুতুল বানানোর মতো সহজ। ভালো বেতন পাই। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি। বৃষ্টি আক্তার ও ঝর্না বেগম নামের আরও দুই কর্মী বলেন, ঘরের পাশে কারখানা হওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তি নেই, খরচ নেই। পায়ে হেঁটে আসি। দুপুরের খাবারও বাড়িতে গিয়ে খাই। প্রোডাকশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মীরা গ্রামের বলে পিছিয়ে নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। আমরা দেশে তৈরি যে কোনো পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছি। উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, কুমিল্লার চাঁন্দপুর গ্রামে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছি। সেখানের নারী কর্মীরা অল্প লেখাপড়া জানা, তাদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে তৈরি মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসায় আমরা নেতৃত্বে রয়েছি। এখন সেই নারীরাই পিয়ারাতলী গ্রামের কারখানায় মোবাইল ফোন তৈরি করছেন। সামনে নারীরা ইলেকট্রনিকস পণ্য ও এন্ড্রয়েড ফোন তৈরি করবেন। কুমিল্লার গ্রামের নারীদের তৈরি পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, গ্রামে নারীরা মোবাইল ফোন তৈরি করছেন, এটি ব্যতিক্রম বিষয়। উদ্যমী উদ্যোক্তার হাত ধরে নারীরা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর