শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেনমোহর নিলেন গাছের চারা

নাটোরে প্রশংসিত নবদম্পতি

নাসিম উদ্দীন, নাটোর

দেনমোহর নিলেন গাছের চারা

নগদ অর্থ বা গহনা নয়, দেনমোহর হিসেবে পরিবেশের উপকারী বন্ধু গাছ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন নাটোরের কনে সুকৃতি আদিত্য। এমন ব্যতিক্রমী দেনমোহরের কারণে আলোচিত হয়েছেন তিনি। সুকৃতি-নাবিন দম্পতি বিয়ের দিন গাছ লাগিয়ে বলেছেন, দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা দূর করে ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতেই গাছ নিয়ে তাদের এমন আয়োজন। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন নবদম্পতি।

গেল শুক্রবার নাটোর শহরের সদরে দিঘাপতিয়ায় ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের পাশে গিয়ে দেখা গেল একটি বিয়ে বাড়িতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, হৈ-হুল্লোর চলছিল। এর মাঝেই কনে সুকৃতি আদিত্য ও বর নাবিন আদনান গাছের চারা রোপণ করে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূর্ব পরিচয় থাকলেও দুই পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া পরিবেশেই বিয়ে সম্পন্ন হয় সুকৃতি-নাবিনের। আর বিয়ের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দেনমোহর হিসেবে পরিবেশবান্ধব গাছ। দেনমোহর হিসেবে আপাতত বরের কাছ থেকে পাঁচটি ফলদ ও বনজ গাছ নেন কনে সুকৃতি। এমন ব্যতিক্রম বিয়েতে প্রশংসায় ভাসছেন সুকৃতি ও নাবিন দম্পতি।

বর নাবিন আদনান জানান, দেনমোহরের আসল কথা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় আমাদের চেয়ে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি।
কনে সুকৃতি ও তার বাবা মায়ের গাছ এবং পরিবেশের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে তিনজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নেন গাছ। পারিবারিকভাবে ধূমধাম করেই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে পাঁচটি ফলদ ও বনজ গাছ হস্তান্তর করেন বরপক্ষ। টাকার অংকের হিসাবে না মিলিয়ে সুকৃতির এমন চিন্তা-চেতনায় আনন্দিত সবাই।

কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়ে মানেই আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য নয়। দুটি মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। সেখান থেকে মনে হলো যদি এমন কিছু করা যায় যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে। সেই সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও সুস্থ রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার আগে আমার মনে হয়েছে গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে, যেটার মাধ্যমে পরিবেশটাও সুস্থ থাকল, আমরাও খুশি থাকলাম পরিবেশের সুস্থতা দেখে।

বর নাবিন আদনান জানান, দেনমোহরের আসল কথা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় আমাদের নিরাপত্তার চেয়ে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশি জরুরি। এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। প্রতীকী ব্যাপার হিসেবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।

কনের বাবা এম আসলাম লিটন জানান, তার মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসেবে তারা সুকৃতির সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর