শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেলে জাকিরের শিল্পকর্মে মুগ্ধতা

বরগুনা প্রতিনিধি

জেলে জাকিরের শিল্পকর্মে মুগ্ধতা

ঘরের দিকে তাকালেই দেখা যাবে করুণ অবস্থা, চারদিক ফাঁকা, ওপরের চাল তাও নষ্ট; এর মধ্যেই হঠাৎ দেখলে চোখ আটকে যাবে একটি কোণে। যেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাঠের তৈরি বিমান, ট্রলার, নৌকা, হরিণ, মাছসহ নানান কাঠশিল্প। শুধু তাই নয়; অনেক ধরনের ট্রলার ও নৌকা তৈরি করেছেন। জাকির হোসেন মুন্সির (৪০) এমন কারুকাজ দেখে খুশি এলাকার মানুষ। এখন জাদুঘর তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি। সুন্দরবনসংলগ্ন বলেশ্বর নদ ঘেষা রুহিতা গ্রাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া জেলে জাকির মুন্সি।

বাবার দেখাদেখি নিজেও মাছ শিকার করেন, কখনো দিনমজুরের কাজ করেন। সময় পেলে নিজের স¦প্ন বাস্তবায়নে লেগে যান। নদী ও খাল পাড়ের বনের পরিত্যক্ত কাঠ এবং শ্বাসমূল তুলে এনে খোদাই করে বিভিন্ন ডিজাইনের শিল্পকর্ম তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জাকির মুন্সি। টানাপোড়েনের মধ্যে চললেও সংসারের দিকে তেমন খেয়াল রাখতে পারছে না তিনি। কিন্তু নিজ চেষ্টায় পরিত্যক্ত কাঠ দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন তিনি। জাকির মুন্সি একজন পর্যটনপ্রেমী, বণ্যপ্রাণিপ্রেমী। এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক সাপ উদ্ধার করেন। সাপ উদ্ধারসহ বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখায় সে টাইগার জাকির হিসেবে পরিচিত। কথা হয় জাকির মুন্সির সঙ্গে। তিনি বলেন, গরিব বাবার সংসারে জন্মগ্রহণ করায় লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে মাছ ধরার কাজ করেছি। মাছ শিকারের পাশাপাশি বন এবং বন্যের প্রতি প্রেম ছিল। বন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণী হত্যা সহ্য করতে পারতাম না। বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, আরিফুর রহমান ও শফিকুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি বলেন, জীবিকার তাগিদে বনের মধ্যে প্রায়ই থাকতে হয়। বনের শ্বাসমূল দেখে সুন্দর লাগায় এটি এনে কাজ শুরু করি। এ ছাড়াও বন থেকে শ্বাসমূলসহ পরিত্যক্ত কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলো ডিজাইন করে চারুকলার মতো সাজিয়ে রেখেছি। এগুলো দিয়ে বাংলাদেশে নৌবাহিনী যুদ্ধের জাহাজ, স্পিড বোট, বাংলাদেশের পতাকা, বিমান, ট্রলার, নৌকা, হরিণ, মাছসহ নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করি।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপও সংরক্ষণ করেছি। প্রবীণ সাংবাদিক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, জাকির অত্যন্ত গরিব মানুষ। মাছ শিকার ও দিনমজুরি করে দিনযাপন করছে। এর মধ্যে নিজ প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে অনেক আকর্ষণীয় শিল্পকর্ম তৈরি করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরও এগিয়ে যাবে। পাথরঘাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, জাকিরের প্রতি আমাদের সুদৃষ্টি রয়েছে। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব।

 

সর্বশেষ খবর