শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাখির জন্য ভালোবাসা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

পাখির জন্য ভালোবাসা

মানুষের কোলাহল দেখলে পাখি উড়ে যায়। আর বগুড়া শহরের শেরপুর সড়কে পাখিরা কোলাহল করে পাখিপ্রেমিক আবদুর রাজ্জাকের অপেক্ষায়। তাকে দেখলে পাখিরা কোলাহল থামিয়ে খাবার খেতে থাকে। খাবার না পেলেই পাখিরা রাজ্জাকের চায়ের দোকানে কোলাহল করতে থাকে। তিন বেলা খাবার খেয়ে পাখিরা নীড়ে ফেরে। খাবার না পাওয়া পর্যন্ত পাখিগুলো রাজ্জাকের চায়ের দোকানে অপেক্ষা করে। রাজ্জাকের দেখাদেখি আশপাশের অন্য ব্যবসায়ীরাও পাখিদের খাবার দিচ্ছেন। জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সড়কের কলোনি এলাকায় আবদুর রাজ্জাক ছোট একটি চা-শিঙাড়ার ভাড়া দোকান দিয়ে সংসার চালান। রাজ্জাকের চায়ের দোকানে সড়কের ডিভাইডারে লাগানো গাছে কয়েক হাজার পাখি আশ্রয় নিয়েছে কয়েক বছর ধরে। টুনটুনি, শালিক, চড়ুই ও দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রাতের বেলায় আশ্রয় নেয় এবং দিনের আলো ফুটতেই কিচিরমিচির করে বের হয়ে যায়। সারা দিন খাবার খেয়ে আবার এই গাছেই আশ্রয় নেয় পাখিগুলো। রাজ্জাক পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম থেকে জেগে চা দোকান খোলেন। খাবার দিলেই তারা খেয়ে চলে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত তার দোকানে পাখিরা খাবার খেতে আসে। প্রথম দিকে অল্প কিছু পাখি এলেও ধীরে ধীরে শত শত পাখি খাবার খেতে আসে। খাবার খুঁজতে আসা পাখিদের দেখে তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিন তিন বেলা শালিক, চড়ুই ও দোয়েল পাখিদের তার দোকানের পুরি, শিঙাড়া ও সমুচা ছোট ছোট করে ভেঙে খেতে দেন। শালিক পাখিরা চানাচুর খেয়ে থাকে বেশি। ধীরে ধীরে পাখির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। আবদুর রাজ্জাক জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই তিনি পাখিদের অনেক ভালোবাসেন। পাখির কিচিরমিচির ডাকে সকালে তার ঘুম ভাঙত। যে কারণে পাখিদের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। পাখিদের খাবার দিতে প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। তবুও ভালো লাগে। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের উপস্থিতি তাকে মুগ্ধ করে। এতে মনেও এক ধরনের শান্তি মিলে। পাখিদের মধ্যে শালিক পাখিরা চানাচুর বেশি খায়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের জীবিত থাকা জরুরি।’ তার মতো আরেক পাখিপ্রেমিক মুদি ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানান, তার কাছে প্রতিদিন শত শত পাখি খাবার খেতে আসে। তিনি পাখিদের চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে দেন। এত পাখির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই সুন্দর মনের অধিকারী হতে হয়।

এদিকে রাজ্জাকের মতো কলোনি এলাকার আফতাব, সাগরসহ পাখিপ্রেমিক আরও সাত থেকে আটজন প্রতিদিন পাখিদের তিন বেলা খাবার দেন। হাজারও পাখি তাদের খাবারের জন্য গাছের ডালে অপেক্ষা করে। খাবার দেওয়া মাত্রই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মাটিতে নেমে খায়। এরপর দিনশেষে নীড়ে ফিরে যায়। পাখিদের প্রতি তাদের এমন ভালোবাসায় সবাই মুগ্ধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর