শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় আশার আলো

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় আশার আলো
এ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা আরও সমৃদ্ধ করবে। আধুনিক এ চিকিৎসাটি দেশে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ও শুরু করা হয়েছে

চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা নাবিলা ইয়ামিন (ছদ্মনাম)। পাঁচ বছর ধরে একটি সন্তানের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। নানাভাবে চিকিৎসাও করিয়েছেন। কিন্তু তাতে সফল হননি। এক বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ‘রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি ও ইনফার্টিলিটি’ (আরএআই) ইউনিটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চিকিৎসায় তারা সন্তান ধারণে সফল হন।

এভাবে কেবল, নাবিলা নন, অনেকেই চিকিৎসা করে সন্তান ধারণে সক্ষম হচ্ছেন। হাসি ফুটতেছে দম্পতির মুখে। কোল জুড়াচ্ছে মা-বাবার। আলোকিত করছে একটি পরিবারকে। নিরসন করছে দাম্পত্য জীবনের অশান্তি ও কলহ। আধুনিক চিকিৎসায় মহিলাদের বন্ধ্যত্ব দূর করে গর্ভবতী করাতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে চমেক হাসপাতালের আরএআই ইউনিটটি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় দেখা দিয়েছে আশার আলো। ইনফার্টিলিটি চিকিৎসার উন্মোচিত হলো নতুন দ্বার।

জানা যায়, চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে নিঃসন্তান দম্পতির চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইনফার্টিলিটি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। চালুর পর থেকে এ ইউনিটে বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগতে থাকা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ নারী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৪৪ জন নারী গর্ভবতী হন। তাছাড়া, বন্ধ্যত্ব সমস্যা দূরীকরণে চমেকের প্রসূতি বিভাগে গত ২৬ অক্টোবর থেকে যুক্ত হয়েছে ‘ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসামিনেশন’ (আইইউআই) আরও একটি আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি। গাইনি চিকিৎসায় আইইউআই নতুন এক সংযোজন। চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বন্ধ্যত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাসলিমা বেগমের তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিকভাবে আউটডোর সেবা, আলট্রাসনোগ্রাফি (টিভিএস), স্যালাইন ইনফিউশন সনোগ্রাফি (এসআইএস), ল্যাপারোস্ককপি, হিস্টারোস্কপি কার্যক্রম শুরু হয়। এ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা আরও সমৃদ্ধ করবে। আধুনিক এ চিকিৎসাটি দেশে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে শুরু করা হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাসলিমা বেগম বলেন, ইনফার্টিলিটি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ১৪৪ নারী এখানে চিকিৎসা নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। এটি ইউনিটের জন্য একটি বড় সাফল্য। এখন এখানে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির আইইউআই সেবা। এ প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় ইউনিটের সক্ষমতা আরও বেড়েছে। এর মাধ্যমে ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আকতার বলেন, আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (এআরটি) অর্থাৎ আইভিএফের পূর্ববর্তী ধাপ আইইউআই প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির ব্যবহারে বন্ধ্যত্ব সমস্যার সমাধান আরও সহজ হবে। এর পরের প্রযুক্তি হচ্ছে আইভিএফ পদ্ধতি। ভবিষ্যতে আধুনিক আইভিএফ পদ্ধতিও চালু করা হবে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, হাসপাতালের গাইনি বিভাগে প্রসূতি রোগীর জন্য নতুন একটি চিকিৎসা প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। আশা করি রোগীরা এই পদ্ধতির সুফল ভোগ করবেন।

সর্বশেষ খবর