শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে

দিনাজপুর প্রতিনিধি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী পাপেট শো বা পুতুলনাচ। লোকনাট্য ধারা এই পুতুলনাচ থেকে মানুষ একসময় বিনোদনসহ বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা গ্রহণ করত। গ্রামীণ মেলা বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা পৌরাণিক কাহিনি ও পালা মঞ্চায়নের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখত এ পুতুলনাচ। যদিও এখনো কিছু অনুষ্ঠান কিংবা মেলায় এই পুতুলনাচ দেখা যায়। একসময় দর্শক-শ্রোতার ভিড়ে গল্প, কবিতা, নাটক, অভিনয়, নাচ, গান, ভাস্কর্য এবং অন্যান্য সার্থক মিলন ঘটত এ পুতুলনাচে। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এটি। সরকারের পরিকল্পিত টেকসই সিদ্ধান্ত ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নতুনদের এ কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তবে সম্প্রতি শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিলুপ্তপ্রায় এ পুতুলনাচ দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছিল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর ইউপির সিঙ্গুল মাঝাপাড়া গ্রামের দুর্গাপূজার আয়োজক কমিটি। কমিটির সভাপতি সুবাশ দাস জানান, বর্তমানে আমরা আগের এই পুতুলনাচের মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতাদের রুচির পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেছি। ষষ্ঠী থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী এই পুতুলনাচের আয়োজন করা হয়েছিল। এ পুতুলনাচের মাধ্যমে পুষ্পমালা-কাঞ্চনকুমার, বেদের মেয়ে জোছনা, যৌতুকের বলি ময়না, মানুষ কেন অমানুষ, মুধুমালা-মদনকুমার, আমি জেল থেকে বলছিসহ নিমাই সন্ন্যাস নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। এই পুতুলনাচ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মসহ মহিলা দর্শকদের মনে দারুণভাবে সাড়া ফেলে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও রুচিশীল মানুষদের চেষ্টায় বিলুপ্তপ্রায় এ পুতুলনাচকে এখনো রক্ষা করা সম্ভব। এ সময় আপন চায়না পুতুলনাচের কণ্ঠশিল্পী প্রদীপ রায় জানান, ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বিনোদনের সহজলভ্যতার কারণে সুষ্ঠু ধারার বিনোদন এ পুতুলনাচের কদর কমতে কমতে আজ শেষ অবস্থায় চলে এসেছে।

একসময় এ পুতুলনাচ ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এখন এটি নিয়ে মানুষ আর তেমন ভাবে না। ফলে অনেকে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। যদিও বছরে দু-এক দিন কারও আগ্রহে এ পুতুলনাচ হয়। আয়োজকরা পুতুলনাচের জন্য আমাদের যে অর্থ দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। আমরা সব সময় অভাব-অনটনের মধ্যেই থাকি।’ নৃত্যশিল্পী নূর জামাল জানান, ‘এমন করুণ অবস্থা দেখে আমাদের নতুন প্রজন্মের এ কাজ শেখার কোনো আগ্রহ নেই। শিল্পকলা একাডেমিসহ সরকারের কাছে আবেদন, বছরের অন্তত ৮০ দিন পুতুলনাচের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে আমাদের রক্ষা করুন। তাহলে একদিকে যেমন আমরা বাঁচব, অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটিও বেঁচে থাকবে।’ এ ব্যাপারে আপন চায়না পুতুলনাচের স্বত্বাধিকারী কুদ্দুস বৈদেশী জানান, নতুনরা এ কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও পুরনোদের সঙ্গে নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। জানি না আর কত দিন ধরে রাখতে পারব।’

 

সর্বশেষ খবর