শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়

হার না মানা আইভির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

জামশেদ আলম রনি

হার না মানা আইভির ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই
জান্নাতুল ফেরদৌসের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি একজন চিত্রনির্মাতা, লেখক ও অধিকারকর্মীর ভূমিকায় কাজ করছেন

রান্না করতে গিয়ে শরীরের ৬০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল তার। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি তিনি। দগ্ধ শরীরের কারণে বিভিন্ন সময়ে সমাজের নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে তাকে। এখনো বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলছি চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস আইভির কথা। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সেই আইভি এবার উঠে এলেন বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়। তবে তার এ দীর্ঘ পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিয়ের পিঁড়িতে পর্যন্ত বসেননি তিনি।

জানা যায়, চলতি বছরের জন্য সম্প্রতি প্রকাশিত এ তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি। তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লুনি, এআই বিশেষজ্ঞ তিমনিত গেবরু, নারীবাদের আইকন গ্লোরিয়া স্টেইনেম, হলিউড তারকা আমেরিকা ফেরেরা, ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ও বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জাও। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যে নারীরা তাদের কমিউনিটি বা সম্প্রদায়কে সহায়তা করার পাশাপাশি এর প্রভাব মানিয়ে নিতে কাজ করেছেন তাদের অনেকে এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তালিকায় ২৮ জন জলবায়ু অগ্রদূতের নাম রয়েছে। এ ছাড়া সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও খেলাধুলা, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিতেও অনেকের নাম রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দুর্ঘটনায় জান্নাতুল ফেরদৌসের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি একজন চিত্রনির্মাতা, লেখক ও অধিকারকর্মীর ভূমিকায় কাজ করছেন।

দগ্ধ নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন ভয়েস অ্যান্ড ভিউজের প্রতিষ্ঠাতা জান্নাতুল। পরিবার ও বন্ধুদের কাছে তিনি আইভি নামেই পরিচিত। এ পর্যন্ত পাঁচটি শর্টফিল্ম তৈরি করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি। তার তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। গল্প বলার দক্ষতা ব্যবহার করে তিনি প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন। ইংরেজি সাহিত্যে তার একটি এমএ ডিগ্রি রয়েছে। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসেও তার একটি ডিগ্রি রয়েছে। চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন শর্ট কোর্স করেন তিনি। আইভির জন্ম খুলনায় হলেও বাবা শরীফ জাফর আহমেদ সিদ্দিকীর বাড়ি গোপালগঞ্জে। ২০১৩ সালে বাবা মারা গেছেন। বর্তমানে জান্নাতুল রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মা মরিয়ম সিদ্দিকী, ভাই শরীফ মো. ঈসার সঙ্গে থাকেন। প্রায় ২৬ বছরের পোড়া ক্ষতের জীবন আইভির। ১৯৯৭ সালের কথা। তখন তিনি কেবল অনার্স শেষ করেছেন। এক দিন রান্না করতে গিয়ে ওড়নায় আগুন লেগে যায়। চিকিৎসকদের ভাষায় পোড়ার পরিমাণ ছিল ৬০ শতাংশ। মুখ, শরীরের ওপরের অংশ পুড়ে কুঁচকে বিকৃত হয়ে যায়। তারপরও বেঁচে যান জান্নাতুল। গলা লেগে গিয়েছিল ঘাড়ের সঙ্গে। এ পর্যন্ত চামড়া প্রতিস্থাপনসহ অস্ত্রোপচার লেগেছে প্রায় ৫০টি। সেই ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি।

সর্বশেষ খবর