শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্যরকম নৌকা মিউজিয়াম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অন্যরকম নৌকা মিউজিয়াম

নৌকা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। চিরায়ত বাংলার অন্যতম স্মারক। কিন্তু আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এই বর্ণিল অনুষঙ্গ। শহুরে কংক্রিটের জীবনে কেবলই অনুপস্থিত নান্দনিক এই স্মারক। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে এই স্মারক ক্রমশ অচেনা হয়ে যাচ্ছে।  চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ব্যতিক্রম এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো নির্মাণ করছে নৌকা মিউজিয়াম। ইতোমধ্যে আধুনিক নিপুণ কারিগর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১৫টি নৌকা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এটি চালুর পরিকল্পনা নিয়ে চলছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট ডিসি পাশেই এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নিজস্ব অর্থায়নে মিউজিয়ামটি তৈরি করছে। দেশে এর আগে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বরগুনা জেলায় ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের একটি নৌকা মিউজিয়ামে চালু করা হয়। ২০১৪ সালে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের কলকাতার কাঁকড়গাছির সিআইটি রোডের আম্বেদকর ভবনে ‘বোট অব মিউজিয়াম’ নামে একটি নৌকা মিউজিয়াম চালু করেছিল। এটি ভারেতর প্রথম এবং কলকাতা শহরের অন্যতম প্রধান নৌকা জাদুঘর।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, নৌকা আমাদের দেশের চিরায়ত বাংলার প্রতীক। এটিকে আমরা মিউজিয়ামের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে দেদীপ্যমান করে রাখতে চাই। তাই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এবং বিভিন্ন দেশের নৌকার রেপ্লিকা এখানে সংরক্ষণ করা হবে। তাছাড়া, হাজার বছরের ইতিহাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে নৌকাগুলো রয়েছে সেগুলোর স্মৃতিও সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মিউজিয়ামের বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ১৫টি নৌকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। মিউজিয়ামে স্থাপন করা হবে বড় আকারের বিভিন্ন ডিজাইনের সাম্পান, বিভিন্ন ধরনের নৌকার রেপ্লিকা। থাকবে নৌকার ইতিহাস-ঐতিহ্য। নতুন প্রজন্ম নৌকা নিয়ে পাবে সমৃদ্ধ একটি ধারণা।

দেশে অঞ্চল ও এলাকাভেদে নানা ধরনের নৌকা আছে। অঞ্চলভেদে এগুলোর আকার-ধরণ ও ডিজাইন ভিন্ন। গঠনশৈলী ও পরিবহনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন আছে। এর মধ্যে আছে- ছিপ নৌকা, বজরা নৌকা, ময়ূরপঙ্খী নৌকা, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙি, পাতাম নৌকা, বাচারি, রপ্তানি নৌকা, ঘাসি, সাম্পান, ফেটি নৌকা, নায়রি, সওদাগরি নৌকা, ইলশা নৌকা, পালতোলা নৌকা, কেড়াই নৌকা, কেড়াই নৌকা, বেদে বা সাপুরিয়া নৌকা, ভোট নৌকা, বৌচোরা নৌকা, লক্ষ্মীবিলাস, গণ্ডিবিলাস, খেয়া নৌকা, বাইচের নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় অনেক ডিজাইন ও নামের নৌকা এখন বিলুপ্তি হয়ে গেছে, কিছু হারিয়ে যাওয়ার পথে এবং কিছু এখন জাদুঘরে। মিউজিয়ামের মাধ্যমে এসব নৌকার স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করে এখানে সংরক্ষণ করা হবে। পক্ষান্তরে, একই সঙ্গে কমে যাচ্ছে মাঝিমাল্লা ও নৌকা তৈরির কারিগর। গ্রামীণ আদলে নৌকা তৈরির স্থান দখল করেছে যান্ত্রিকতা। যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে নৌকা তৈরির সনাতন পদ্ধতি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর