শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

খাবার বিক্রির টাকায় জাপানি বৃদ্ধাদের স্কুল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

খাবার বিক্রির টাকায় জাপানি বৃদ্ধাদের স্কুল

তোশিকো ওনিশি বলেন, শিশুদের মুখের হাসি দেখতে সুদূর জাপান থেকে এসেছি। আমাদের দেশে তরুণের সংখ্যা কম, এখানের তরুণদের দেখে হিংসা হয়! তাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।  আমরা কোনো এনজিও নই, বন্ধুরা নিজেদের আয় থেকে অংশ নিই। বয়স হয়েছে, কতদিন চালাতে পারব জানি না

 

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ের একটি গহিন এলাকা বড় ধর্মপুর। ২০১৬ সালে সেখানের নির্জন জঙ্গলে গড়ে উঠে মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুল। এটির ৪০ ভাগ ব্যয় বহন করেন কুমিল্লার তারিক-উল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার মজুমদার। বাকিটা বহন করেন তাদের জাপানি বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তোশিকো ওনিশিসহ তার সহপাঠীরা। তোশিকো ওনিশি অবসরে জাপানের বিভিন্ন স্কুলে খাবার বিক্রি করেন। সেই টাকা এখানে সহায়তা করেন। বৃহস্পতিবার চার জাপানি বন্ধু আসেন লালমাই পাহাড়ের মজুমদার ওয়ান ড্রপ প্রাইমারি স্কুলে। সেখানে তারা জানান স্কুল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। জামা, জুতা, বই-খাতা, দুপুরের খাবার স্কুল বহন করে।

তোশিকো ওনিশি বলেন, শিশুদের মুখের হাসি দেখতে সুদূর জাপান থেকে এসেছি। আমাদের দেশে তরুণের সংখ্যা কম, এখানের তরুণদের দেখে হিংসা হয়! তাদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কোনো এনজিও নই, বন্ধুরা নিজেদের আয় থেকে অংশ নিই। বয়স হয়েছে, কতদিন চালাতে পারব জানি না। কেউ ইচ্ছা করলে স্কুলের খরচ বহনে অংশ নিতে পারেন।

সংস্কৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের মানুষ অতিথিপরায়ণ। তবে মানুষ সময় অনেক অপচয় করে। এদিকে তিনি এখানের বিরানির খুব ভক্ত বলে জানান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান ফটকে জাপানি, ইংরেজি ও বাংলায় স্কুলের নাম লেখা। ফটকের ওপরে পতপত করে উড়ছে সবুজের ওপরে লাল বাংলাদেশি ও সাদার ওপরে লাল বৃত্তের জাপানি পতাকা। শিক্ষার্থীদের পরনে সবুজ প্যান্ট ও সাদা জামা। কক্ষের পাশ দিয়ে যেতে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে সালাম ও শুভেচ্ছা জানায়। কারও চেয়ার টেবিল লাল-সবুজ রঙের। কারওগুলো সাদা। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী ১০০ জন। বৃহস্পতিবার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বরণ ও খেলাধুলার আয়োজন ছিল। তাদের সঙ্গে জাপানিদের মজা করতে দেখা যায়।

স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ইয়াসমিন আলী বলেন, এখানের অধিকাংশ শিশুর পরিবারের কেউ স্কুলে যায়নি। কারও মা নেই পরিবারে। কারও বাবা নেই। নানা বা দাদার পরিবারে বড় হচ্ছে। কেউ কেউ সকালের খাবার খেয়ে স্কুলে আসতে পারে না। এখানের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। বইয়ের সঙ্গে তাদের জীবন পরিচালনা ও পরিচ্ছন্নতায় আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। হাত পরিষ্কার করা, ওয়াশরুম ব্যবহার ইত্যাদি।

স্কুলের উদ্যোক্তা তারিক-উল ইসলাম মজুমদার বলেন, জাপানে কিছু বন্ধু রয়েছে। তারা একবার কুমিল্লায় বেড়াতে আসেন। তারা কান্দিরপাড়ে কিছু ভিক্ষুককে অনেক টাকা দিতে থাকেন। বিষয়টি আমার স্ত্রী নাহিদা আক্তার মজুমদারের নজরে আসে। তিনি বলেন, এভাবে তো মানুষের উপকার হবে না। পাহাড়ের শিক্ষার আলো জ¦ালাতে কাজ করা যেতে পারে। সে নিরিখে আমরা তাদের প্রস্তাব দিই। জাপানি বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তোশিকো ওনিশিসহ তার সহপাঠীরা এই স্কুলের ব্যয়ভার বহনে সহযোগিতা করেন। প্রতি জানুয়ারি মাসে এসে তারা স্পোর্টস ডে করেন।

সর্বশেষ খবর