শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিচারপ্রার্থী মানুষের ভরসা ন্যায়কুঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বিচারপ্রার্থী মানুষের ভরসা ন্যায়কুঞ্জ

ন্যায়কুঞ্জ ভবনের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ বিচারপ্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ন্যায়কুঞ্জের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাচ্ছেন এবং মামলার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। একজন আইনজীবী বলেন, ন্যায়কুঞ্জ  সত্যিকার অর্থে বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্রামের জন্য ভরসার স্থান হয়ে উঠছে।

 

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী তাদের মামলা-মোকদ্দমার প্রয়োজনে আদালত ভবনে আসেন। বিচারিক কাজের প্রয়োজনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের আদালত ভবনে অবস্থান করতে হয়; কিন্তু আদালত ভবনে প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগার না থাকায় তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশু বিচারপ্রার্থীকে আদালত ভবনে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। আদালত ভবনে আসা জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা ছিল অপ্রতুল। সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে সারা দেশের অন্যান্য জেলার মতো চট্টগ্রাম আদালত ভবন প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয়েছে বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ নামক ভবন।

গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ন্যায়কুঞ্জ ভবন নির্মাণ শেষে গত বছরের ২৫ অক্টোবরে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ভার্চুয়ালি ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধন করেন এবং তা বিচারপ্রার্থী মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের নাজির এনামুল হক আকন্দ (বাহার) বলেন, জাজ-ইনচার্জ নেজারতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ন্যায়কুঞ্জের সার্বিক বিষয়াবলি দেখভাল করা হয় এবং প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যাতে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়কুঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়।

দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের ন্যায়কুঞ্জ ভবনে বিচারপ্রার্থী মানুষের বসার সুব্যবস্থা, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেট, মাতৃদুগ্ধ পান কর্নার ও একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে আগত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহজেই ন্যায়কুঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ লাভ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ফটিকছড়ি থেকে আগত একটি পারিবারিক মামলার বাদী আকলিমা বেগম বলেন, মামলার প্রতি ধার্য তারিখ তিনি তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে আদালতে আসেন। কিন্তু শিশুকে দুধ পান করানোর কোনো নির্ধারিত স্থান না থাকাসহ টয়লেট ব্যবহারের কোনো সুবিধা না থাকায় তাকে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমানে ন্যায়কুঞ্জ চালু হওয়ায় তিনি এ বিড়ম্বনা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব ইউছুফ আলী জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি মামলার কাজে নিয়মিত আদালত প্রাঙ্গণে আসছেন। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের সুব্যবস্থা না থাকায় তার মতো বয়স্ক মানুষদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। ন্যায়কুঞ্জ স্থাপিত হওয়ায় তাদের সেই দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে।

ন্যায়কুঞ্জ ভবনের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ বিচারপ্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ন্যায়কুঞ্জের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাচ্ছেন এবং মামলার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। এক আইনজীবী বলেন, ন্যায়কুঞ্জ সত্যিকার অর্থে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য ভরসার স্থান হয়ে উঠছে। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের মতো বিভাগীয় শহর যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেবাপ্রার্থী হিসেবে আদালত ভবনে আসেন সেখানে ন্যায়কুঞ্জের পরিসর আরও বাড়ানো হলে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপনের উদ্দেশ্য সফল হবে।

সর্বশেষ খবর