শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

তবুও দমে যাননি নাহিদুল

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

তবুও দমে যাননি নাহিদুল

অটো চালিয়েই তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন নাহিদুল। দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন হয় তার। তবে নিজের একটি অটোরিকশা থাকলে জীবন আরও সহজ হতো বলে জানান নাহিদুল

 

কুষ্টিয়া শহরের বাসিন্দা নাহিদুল ইসলাম  ছিলেন সুস্থ স্বাভাবিক শ্রমজীবী মানুষ। রড-গ্রিলের কাজে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। একটি দুর্ঘটনায় দুই হাতের কবজি পুড়ে যায় তার। তবে হাত হারালেও হাল ছাড়েননি নাহিদুল। বেছে নেননি ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা সহজ কোনো জীবন। মুক্তি খুঁজেছেন কর্মেই। তিনি এখন অটোরিকশা চালক। কবজি ছাড়া হাত দিয়ে চালানোর জন্য ভাড়ার অটোরিকশার কাঠামো বদলে নিয়েছেন। এই অটো চালিয়েই চালিয়ে নিচ্ছেন তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গড়া পাঁচজনের সংসার।

নাহিদুল ইসলাম রনি (৩২) হরিশঙ্করপুরের আবদুল বারিক শেখের ছেলে। ২০১৩ সালে শহরের বজলুর মোড়ে শ্রমিক হিসেবে একটি ভবনের বারান্দার গ্রিলে এস এস পাইপ লাগাচ্ছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত তার হাতে থাকা ২০ ফুট লম্বা পাইপ গিয়ে পড়ে বিদ্যুতের তারে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে পুড়ে যায় নাহিদুলের দুই হাত। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা নেন তিনি। জীবন বাঁচলেও রক্ষা পায়নি দুই হাতের কবজি।

নাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাত বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি কাজের জন্য। মানুষ সাহায্য দিতে চান কিন্তু পঙ্গু মানুষকে কাজ দিতে চান না। অবশেষে কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ার অটোরিকশা মিস্ত্রি সুমন তার চালানোর উপযোগী একটি অটোরিকশা বানিয়ে দেন। করোনা মহামারির সময় যখন অটোরিকশার চালক পাওয়া যেত না তখন নাহিদুলের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য তিনি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন। অটোরিকশার হাতল দুটির ওপরে একটি করে স্টিলের রিং লাগিয়ে দিয়েছেন, যাতে তার কবজি ছাড়া হাত ওখানে আটকে থাকতে পারে। আর হাতলের সঙ্গে কাপড় জড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে হাত টেনে আনলেই পিকআপ বেড়ে যায়। নাহিদুল বলেন, এই অটোরিকশার বাম হাতলের সঙ্গে একটি ও পায়ে একটি ব্রেক ছিল। হাতের ব্রেকটি খুলে ফেলে পায়েরটি জোরালো করে দেওয়া হয়েছে। নাহিদুল সবসময় গলায় একটি গামছা ঝুলিয়ে রাখেন যা দিয়ে ঢেকে রাখেন দুই হাত। তিনি বলেন, এতে করে মানুষের নানান প্রশ্নের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া পঙ্গু লোকের অটোতে উঠতে চান না অনেকে। সেজন্য ঢেকে রাখি।

এখন দিনে তার কাছ থেকে ৩২০ টাকা ভাড়া নেন অটোর মালিক সুমন। এর মধ্যে চার্জ দেওয়া বাবদ ১০০ টাকা আর গাড়ি ভাড়া ২২০ টাকা। তবে, শুক্রবার শুধু চার্জের টাকাটা নেন। এই অটো চালানোর উপার্জন দিয়েই তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন নাহিদুল। তিনি বলেন, দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন হয় তার। তবে নিজের একটি অটোরিকশা থাকলে জীবন আরও সহজ হতো, বলেন নাহিদুল।

সর্বশেষ খবর