সালমানপুর। কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ পশ্চিম অংশের শেষ মাথার একটি গ্রাম। এখানে পাহাড় সমতলের মাঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্ক ও প্রত্ননিদর্শনের যত সমারোহ। শালবন বৌদ্ধবিহারের উত্তর পাশ দিয়ে একটি সরু সড়ক দক্ষিণ দিকে প্রবেশ করেছে। নিরিবিলি, ছায়াঢাকা এলাকা। এখানে বাসচালক আবুল কাশেম ফকিরের ছোট টিনশেড বাসা। বাসার সামনে গোছানো ফুলের বাগান। এ বাসা থেকে প্রতিদিন একটি মেয়ে বের হন। গন্তব্য দেড় কিলোমিটার দূরের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এলাকায় নতুন আসা অনেকে মনে করেন মেয়েটি শিক্ষার্থী। তবে স্থানীয়দের থেকে জানার পর তাদের ভুল ভাঙে। তিনি শিক্ষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক কাশমী সুলতানা। যখন মানুষ জানেন একজন বাসচালকের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, তখন আরও বিস্মিত হন। তবে তাদের বিস্ময়ে মেয়েটির বাবা আনন্দিত হন।
বাবা আবুল কাশেম ফকির বলেন, বেশি সদস্যের পরিবারের সন্তান তিনি। তাই পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া বেশি এগোতে পারেননি। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। সে কারণে সেখানের নিয়ম-শৃঙ্খলায় অভ্যস্ত ছিলেন। বেশি লেখাপড়া না থাকায় কোর্স করার পর চালকের কাজে যোগ দেন। ক্যাডেট কলেজের বাস চালাতেন। একসময়ে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান চালক হন। ২০১৭ সালে অবসরে যান। এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় দুজন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। ছোট মেয়ে হাই স্কুলে পড়েন। ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। বর্তমান উপাচার্য তাঁকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। তিনি মনে করেন, হালাল আয়ে পরিবার চালাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। লেখাপড়ায় অর্থের চেয়ে ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। নিজে যেহেতু এগোতে পারিনি তাই ছেলেমেয়েকে গড়ে তোলায় সময় দিয়েছি। এ জন্য তাঁর স্ত্রী বিলকিস বেগমের অনেক পরিশ্রম রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর অনেক বন্ধু বড় সেনা কর্মকর্তা হয়েছেন। তার খোঁজখবর নেন। তারা তাঁর সন্তানদের এগিয়ে যাওয়া দেখে অভিনন্দন জানান। এতে তাঁর ভালো লাগে। বিলকিস বেগম বলেন, আল্লাহর রহমত ছিল। ছেলে মেয়েরাও বাধ্য ছিল। তাদের পড়াতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তাদের বাবা বাইরে সামলিয়েছেন, তিনি ঘরে তাদের দেখভাল করেছেন।