শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

যেভাবে টাইমের প্রভাবশালীর তালিকায় মেরিনা

জামশেদ আলম রনি

যেভাবে টাইমের প্রভাবশালীর তালিকায় মেরিনা

টাইম লিখেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে মেরিনা এমন এক ধরনের বাড়ি তৈরি করেছেন, যার নির্মাণ  ব্যয়ও কম এবং সহজে স্থানান্তরযোগ্য।

 

বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম। পরিবেশগতভাবে টেকসই ডিজাইনে অবদানের জন্য তিনি অধিক পরিচিত। তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন অনেক। এবার স্বনামধন্য মার্কিন সাময়িকী টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন এ বাংলাদেশি নারী। উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে টাইমের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। মেরিনা তাবাশ্যুম স্থাপত্যশিল্পে দেশ-বিদেশে পরিচিত মুখ। সুলতানি আমলের স্থাপত্য রীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের নকশাকার তিনি। মসজিদটির অসাধারণ নকশা তাকে এনে দেয় স্থাপত্যে সম্মানজনক পুরস্কার আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার।

মেরিনা তাবাশ্যুমের সঙ্গে একই তালিকায় রয়েছেন রাশিয়ার ইউলিয়া নাভালনায়া, শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদী, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কসহ পরিচিত অনেকেই। ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আলিয়া ভাটও রয়েছেন। তালিকায় এ ছাড়াও রয়েছেন- যুক্তরাষ্ট্রের অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সোফিয়া কপোলা, অস্ট্রেলিয়ার গায়িকা কাইলি মিনোগ, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী জেনি হোলজার, সাহিত্যিক লরেন গ্রফ, যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী ও টকশো উপস্থাপক কেলি রিপা প্রমুখ।

মেরিনা সম্পর্কে টাইম লিখেছে, সচরাচর পুরস্কারজয়ী স্থপতিদের সঙ্গে পরোপকার শব্দটি তেমন একটা উল্লেখ করা হয় না। তবে মেরিনা তেমন সাধারণ নন। তিনি স্থাপত্য চর্চায় এমন একটি চর্চা তৈরি করেছেন, যাতে স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পাশাপাশি আমাদের এ ধরিত্রী যে বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অগ্রাধিকার পায়।

টাইম লিখেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে মেরিনা এমন এক ধরনের বাড়ি তৈরি করেছেন, যার নির্মাণ ব্যয়ও কম এবং সহজে স্থানান্তর  যোগ্য।

স্থপতি মেরিনা এর আগেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০২১ সালে মানবিক ঘর তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যের মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পান তিনি। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্টের ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। মেরিনা ১০ জনের মধ্যে তৃতীয় হন।

ঢাকার দক্ষিণখানে বায়তুর রউফ নামের একটি শৈল্পিক নকশার মসজিদের স্থপতি হিসেবে ২০১৮ সালে জামিল প্রাইজ পান তিনি। এর আগে একই নকশার জন্য ২০১৬ সালে পান সম্মানজনক আগা খান পুরস্কার। মসজিদটি ২০১২ সালে ঢাকায় নির্মিত হয়। স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুমের জন্ম ঢাকায়। তার বাবা ছিলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার পরিবার ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। রাজধানীর হলি ক্রস উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন মেরিনা। উচ্চমাধ্যমিকও সেখান থেকে পাস করেন।

১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরের বছর বাংলাদেশের আরেক স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা প্রতিষ্ঠা করেন মেরিনা।

২০০৫ সালে নিজের এক প্রতিষ্ঠান খোলেন তিনি, নাম দেন মেরিনা তাবাশ্যুম আর্কিটেক্টস। তিনিই এটির প্রধান স্থপতি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘরের দুজন নকশাকারের একজন মেরিনা তাবাশ্যুম। অন্যজন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইতুর রউফ মসজিদ নিয়ে মেরিনা বলেছেন, কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।

সর্বশেষ খবর