শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

আবদুল বারী, নীলফামারী

সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদটি ১৮৬৩ সালে সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের মুসল্লিরা বলেন, সৈয়দপুর হচ্ছে  একটি প্রাচীন জনপদ। তারা লোকমুখে শুনেছেন এই জনপদের পাশ ঘেঁষে সরমঙ্গলা নামে একটি নদী প্রবাহিত হতো।

 

এ উপমহাদেশে যেসব সুফি-সাধকের আগমন ঘটেছিল তাদের প্রেরণাতেই পরবর্তীকালে মুসলিম শাসন ও মুঘল আমলে এখানে বহু মসজিদ গড়ে ওঠে। ধর্ম প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি মুসলিম সাধকরা ইসলাম অনুসারীদের আকৃষ্ট করতে শিল্পময় উপাসনালয় তৈরিতে মনোনিবেশ করেন। ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদ। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায় এ মসজিদের অবস্থান। মসজিদটি নির্মাণে প্রধান কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। আর মসজিদটির দেয়াল ঘেঁষে সমসাময়িক সময়ে গড়ে ওঠে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। চিনি মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থী ছুটে আসেন সৈয়দপুর শহরে। দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদটি ১৮৬৩ সালে সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদের মুসল্লিরা বলেন, সৈয়দপুর হচ্ছে একটি প্রাচীন জনপদ। তারা লোকমুখে শুনেছেন এই জনপদের পাশ ঘেঁষে সরমঙ্গলা নামে একটি নদী প্রবাহিত হতো। এখন সেই নদী মৃতপ্রায়। ১৬০০ সালে ওই নদী দিয়ে এই জনপদে মুসলমানদের আগমন ঘটে। প্রবীণ পুথি লেখক ও কবি আবুল হোসেন আদানি স্থানীয় একটি পত্রিকায় তার নিবন্ধে লিখেছিলেন- আফগানিস্তানের কাবুল থেকে সৈয়দ বংশের কিছু মানুষ কাফেলা নিয়ে সৈয়দপুরে এসেছিলেন। তখন এই জনপদ ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। নীলফামারী মহকুমার দারোয়ানি থানার অধীন ছিল সৈয়দপুর গ্রামটি। সৈয়দপুরের পূর্ব নাম জানা যায়নি। তবে ধর্ম প্রচারে আসা সৈয়দ বংশের জনগোষ্ঠীর কারণে জনপদটি সৈয়দপুর নামে পরিচিত হতে থাকে।

১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা গড়ে ওঠে। তখন চলছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল। কারখানা প্রতিষ্ঠার অনেক আগে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায় টিন ও শন দিয়ে চিনি মসজিদটি গড়ে ওঠে।  মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি হাজি বাকের আলী ও হাজি মক্কু। তারা সিদ্ধান্ত নেন ইসলামবাগে একটি মসজিদ গড়ার। মসজিদটিতে দিন দিন মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে দোচালা টিনের ঘরে রূপান্তর করা হয় মসজিদটিকে।

চিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি হিটলার চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ গড়ে তুলতে এর নেপথ্যে রয়েছে অনেক ইতিহাস। মসজিদ ঘিরে এলাকায় মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় মসজিদের পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এলাকার বাসিন্দা হাজি আবদুল করিম নিজ হাতে একটি নকশা তৈরি করেন। ১৯২০ সালে ওই নকশা অনুযায়ী চিনি মসজিদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দেওয়া চাঁদায় কলকাতা থেকে আনা হয় ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর।

এ ছাড়াও বগুড়ার একটি সিরামিক কারখানার মালিক বিনামূল্যে ২৫ টন ভাঙা কাপ-পিরিচের টুকরা সৈয়দপুরে পাঠিয়ে দেন মসজিদ নির্মাণের জন্য। মসজিদটি নির্মাণে দায়িত্ব পড়ে হিন্দু রাজমিস্ত্রি শঙ্ঘ রায়ের ওপর। তাকে সহযোগিতা করতে নামেন শত শত নারী ও পুরুষ।

সর্বশেষ খবর