শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বই বিনিময় উৎসব

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বই বিনিময় উৎসব
অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন কাগজের দাম আকাশচুম্বী, বাড়ছে বইয়ের দাম, তখন পাঠক তার বই পড়াকে শানিত রাখতে এ উৎসবের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বই বিনিময়ে মূল্য গুনতে না হওয়ায় যে কারোরই বই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে এবং তা চালু রাখতে সহজ হচ্ছে।

টেবিলে থরে থরে সাজানো বই। কেউ জমা দিচ্ছেন, কেউ নিচ্ছেন। পড়া শেষে বাসার সেলফে পড়ে থাকা বই দিয়েও নিচ্ছেন আরেকটি পছন্দের বই। সংগ্রহ করা যাচ্ছে প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি। সঙ্গে আছে একাডেমিক ও ম্যাগাজিন সেকশন থেকে অফুরন্ত বই বিনিময়ের সুযোগ। কেবল বই দিয়েই বই বিনিময়, টাকা দিয়ে নয়। পুুরো দিনটিই ছিল বই বিনিময়ের।

চট্টগ্রাম নগরের জামাল খান মোড়ে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘বই বিনিময় উৎসব’। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। উৎসব শুরুর পর থেকেই ব্যতিক্রমী এ বই বিনিময়ে বইপ্রেমী তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপক সমাগম লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। এবারের বই বিনিময় উৎসব উৎসর্গ করা হয় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি।

‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ স্লোগানে ২০২১ সাল থেকে বইকে মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলা ও বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের উদ্যোগে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বই বিনিময় উৎসবটি। এবারের উৎসবে ছিল বইয়ের ১১টি স্টল এবং দুটি রেজিস্ট্রেশন বুথ। ১১টি স্টল থেকে পৃথক ১১ ক্যাটাগরির বই বিনামূল্যে বিনিময় করা হয়েছে।

ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বই বিনিময় উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর বলেন, করোনাকালীন মুখ থুবড়ে পড়ে বইমেলা। তখন চিন্তা করি কীভাবে পাঠকদের বইমনস্ক রাখা যায়। মাথায় চিন্তা এলো, আমরা নানাভাবে বই বিনিময় করে থাকি। বন্ধুকে বই দিই, বন্ধুর থেকে বই আনি। এ ব্যাপারটিকে উৎসব আকারে নিয়ে এসেছি। যত বেশি বৈচিত্র্যের বই সামনে থাকবে, বই নিয়ে তত বেশি জানতে পারব। তবে বই বিনিময় ধারণাটা আগে থেকেই চালু ছিল। জার্মানি, কলকাতায় এমন সংস্কৃতি চালু আছে। তিনি বলেন, প্রথমবারই বিপুল সাড়া মেলে। তাই দ্বিতীয়বার আয়োজন করি। সময়ের সঙ্গে এ উৎসব এখন চট্টগ্রামের মানুষের লাইফস্টাইলের অংশ হয়ে উঠছে। বুঝতে পারি, অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন কাগজের দাম আকাশচুম্বী, বাড়ছে বইয়ের দাম, তখন পাঠক তার বই পড়াকে শানিত রাখতে এ উৎসবের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বই বিনিময়ে মূল্য গুনতে না হওয়ায় যে কারোরই বই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে এবং তা চালু রাখতে সহজ হচ্ছে। এর মাধ্যমে পাঠকও উপকৃত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এ উৎসব অনেক বেশি শিক্ষার্থীনির্ভর হয়ে উঠছে। ফলে ক্রমেই এটি এখন চট্টগ্রামের পাঠকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের এ বই বিনিময় উৎসবে একজন পাঠক তার পঠিত বইটি রেখে বিনামূল্যে বিনিময় করে নিয়ে যেতে পারেন পছন্দের অন্য বইটি। বইয়ের মধ্যে আছে- কথাসাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, শিশুতোষ, ভ্রমণ, জীবনী, ম্যাগাজিন, ইতিহাস, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও একাডেমিকসহ ১১টি ক্যাটাগরি। টেবিলে সারি সারি করে সাজানো থাকে, তার মধ্য থেকে যে কেউই তাদের ক্যাটাগরি অনুযায়ী বই বিনিময় করে নিয়ে যেতে পারেন। উৎসবের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করে রাখা হয় ৪ হাজারের বেশি বই। সারা দিন প্রায় ২৫ হাজার বই বিনিময় হয়। গত বছর বই বিনিময় হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার।

সর্বশেষ খবর