শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

তবুও চলছে বাঁচার লড়াই

শফিকুল ইসলাম খোকন, পাথরঘাটা (বরগুনা)

তবুও চলছে বাঁচার লড়াই

মুখে হাসি আর মিষ্টি কথার বুলি। হাসি-খেলায় মাতলেও শূন্যতা রয়েছে দুই পা, এক হাতবিহীন সুলতানার। এ শূন্যতায় কাঁদছে পরিবার ও প্রতিবেশীরাও। জন্ম থেকেই সুলতানার দুটি পা নেই, ডান হাত নেই। এক হাতের ওপর ভর দিয়ে চলবে তারও কোনো উপায় নেই। বিছানাই যেন তার একমাত্র ভরসা। অন্য শিশুরা বাড়ির উঠানে খেলায় মেতে উঠলেও তাদের সঙ্গে খেলতে পারছে না সে। এখন বুঝতে শুরু করেছে সুলতানা। ওর হাত নেই, পা নেই।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা খাদিজা বেগম। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামের সুলতান মিয়ার মেয়ে সুলতানা। সুলতানার জন্ম ২০২১ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি। অনেক আদর করে বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে শিশুর নাম রেখেছেন সুলতানা। প্রথম সন্তান সুমনের জন্ম নেওয়ার ১৭ বছর পর জন্ম হয় সুলতানার।

বাবা সুলতান বুকভরা কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘আমাদের কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমাগো শান্তিই হলো কান্না। এখন মেয়েটার বয়স তিন বছর। দুটি পা এবং একটি হাত নেই। মেয়ে চলাফেরা করার জন্য অনেক আশা করে কিন্তু পারে না। সব পোলাপান খেলে, ও খেলতে পারে না। আমার সন্তান, আমি তো ফেলতে পারি না। যতদিন আছি আমিই লালনপালন করব কিন্তু বড় হইলে ভবিষ্যতে কে দেখবে এই চিন্তাই করি।’ মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘মনুরে আল্লাহ এভাবে বানাইছে, মনুর বয়স এহন তিন বছর। এহন কথা বলতে পারে, সবাই হাঁটে ও হাঁটতে পারে না। বলে মা মুই হাঁটতে পারি না ক্যা? মোর পাও নাই ক্যা। ওর কথার উত্তরে একটাই বলি, তোমারে আল্লাহ বানাইছে। মাঝে মাঝে সুলতানা বলে, মোর হাত-পা অইবে তো, মুই হাঁটতে পারমু? মা... মোর পা অইবে... মুই হাঁটতে পারমু...!’ প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুলতানার জন্ম থেকেই খোঁজ রাখছেন প্রতিবেশীরা। তার মা-বাবা তাকে নিয়ে খুব কষ্ট করছেন এবং দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা। তাদের কষ্ট দেখে প্রতিবেশীদেরও খুব কষ্ট হয়।

মির্জা এস আই খালেদ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘শিশুর স্বাভাবিক বেঁচে থাকার অধিকার যেমন আছে তেমনি রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা চাইলে শিশুটির পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন। এতে তার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’ স্থানীয়রা বলেন, ‘সুলতানার জন্মের পরপরই প্রথম আমাদের নজরে আসে। আমরা তখন থেকেই সুলতানার খোঁজখবর নিচ্ছি এবং যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি।’

ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘এটি আসলেই নির্মম। উপজেলা প্রশাসন সব সহযোগিতা নিয়ে তার পাশে থাকবে। ইতোমধ্যে সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্য তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর