শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার রাজ্য চরবিজয়

উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার রাজ্য চরবিজয়

বঙ্গোপসাগরের বুকে অন্য এক ভুবন, যার নাম ‘চরবিজয়’। চারদিকে অথই জলরাশি, আর শুধু ধু ধু বালু। নেই জনবসতি কিংবা গাছপালা। সকাল থেকে সন্ধ্যা চেনা-অচেনা নানা প্রজাতির অতিথি পাখির কলকাকলি ও লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরের সন্ধান মেলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। বিজয়ের মাসে এর সন্ধান পাওয়ায় নাম রাখা হয় ‘চরবিজয়’। সবমিলিয়ে এ চরটি এক অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনস্থল। বর্তমানে চরের আয়তন আরও বড় হচ্ছে এবং সবুজ বনায়ন তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, মনোমুগ্ধকর এ চরবিজয়ের আয়তন প্রায় ২ হাজার ৫৭৩ একর। আকৃতি কিছুটা ডিমের মতো। বর্ষা মৌসুমে এ চরটি পানিতে ডুবে থাকে। আর শীত মৌসুমে সাগরের মধ্যে বিশাল এলাকা নিয়ে জেগে ওঠে। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের অভয়ারণ্য হওয়ায় সারা বছর এর আশপাশে থাকে জেলেদের উপস্থিতি। জেলেদের ভাষ্যমতে, এটি ‘হাইরের চর’ হলেও বর্তমানে ‘চরবিজয়’ নামে বেশ পরিচিত। তবে ভ্রমণপিপাসুদের একটি দল এ চরটির সন্ধান পায়। এ চরটিতে নেই কোনো দোকানপাট, তাই কুয়াকাটা থেকেই খাবার ও পানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। সকালে গিয়ে ভ্রমণ উপভোগ করে বিকালেই ফিরে আসতে হয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এ চরটি যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। ‘চরবিজয়’ এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পে ঘটাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন- এমন প্রত্যাশা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পশুপাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলার জন্য পুরো চরটিতে ঝাউসহ ম্যানগ্রোভ জাতীয় বনায়নের কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। সঠিক তদারকিতে তৈরি হবে একটি বাসযোগ্য নতুন সমভূমি। যাকে ঘিরে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পে তৈরি হবে ভিন্ন মাত্রা। এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

পর্যটকরা বলেন, চরবিজয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা মেলে। সমুদ্রের মাঝখানে জেগে ওঠা চর। রয়েছে পাখিদের সমাহার এবং লাল কাঁকড়ার বিচরণ। এ ছাড়া চরটিতে দাঁড়িয়েই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়।

ট্যুরিস্ট বোর্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনি আলমগীর বলেন, ‘মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই লাল কাঁকড়ার দল ছোটাছুটি করছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কাঁকড়াগুলো গর্তে লুকিয়ে থেকেও উঁকি দিয়ে পর্যটকদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। যা বিমোহিত করে পর্যটকদের। তাই প্রতিদিনই পর্যটকরা ট্রলার-স্পিডবোটে নিয়ে চরবিজয় দেখতে যাচ্ছেন। চরটি দেশের ‘দ্বিতীয় সেন্ট মার্টিন’ হবে বলে আশা করছি।’

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কুটুমের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বন বিভাগ এ চরে গোল, ছইলা, কেওড়া, সুন্দরসহ ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের চারা রোপণ করে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কয়েক লাখ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। শীত কমলে পাখিগুলো অন্যত্র চলে যায়। এখন প্রতিদিনই পর্যটকরা ট্রলারযোগে এ চরটিকে দেখতে যায়।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, এটি কুয়াকাটার জন্য আশীর্বাদ। শুধু লাল কাঁকড়া কিংবা অতিথি পাখিই নয়; ঝাউ ও ম্যানগ্রোভ বন পর্যটকদের টানবে চরবিজয়ে।

 

সর্বশেষ খবর