শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

৫৩ বছর পর মা-মেয়ের মিলন

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

৫৩ বছর পর মা-মেয়ের মিলন

‘মা’ শব্দটি ছোট্ট কিন্তু এমন মধুর নাম ত্রিভুবনে নেই। মাকে নিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের লেখনীর যেন শেষ নেই। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ এই ‘মা’। প্রতিটি সন্তানের সবচেয়ে আপন ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা। যিনি সবার জায়গা নিতে পারলেও তাঁর স্থান কেউ নিতে পারে না। তাঁকে নিয়ে যত গান, কবিতা তবুও যেন শেষ হয় না কথা। যার মা নেই সেই জানে এর শূন্যতা। দীর্ঘদিন পর তাঁকে কাছে পাওয়ার আনন্দ কতটা মধুর সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনই এক বিরল ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুর শহরের একটি পরিবারে। হারিয়ে যাওয়ার ৫৩ বছর পর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মাকে কাছে পেয়ে এক মেয়ের জীবনে বইছে সীমাহীন আনন্দ। তাদের এ আনন্দের খবর ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে।

ঘটনাটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। মেয়ে উম্মে মুরসেলিনার বয়স তখন তিন বছর। ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে সে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে এক ট্রাকচালকের কাছে আশ্রয় পান উম্মে মুরসেলিনা ও তার ছোট বোন। যুদ্ধের পর বাবাকে ফিরে পেলেও মাকে হারিয়ে ফেলেন। মা হারানোর বেদনায় কেঁদেছেন, মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়েছেন। তবে কখনো হাল ছাড়েননি। ছোটবেলার ছবি নিয়ে খুঁজতে থাকেন মাকে। অর্ধশত বছরের চেষ্টায় একপর্যায়ে এক ইউটিউবারের সহযোগিতায় পাকিস্তানে খোঁজ পান মায়ের। অবশেষে ঢাকা বিমানবন্দরে ৫৩ বছর পর দেখা হয়েছে সেই মায়ের। এবার তারা এসেছেন জন্মস্থান দিনাজপুরে, যেখানে তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন। মা-মেয়ের এ মিলনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকেই। উম্মে মুরসেলিনার বাড়িতে এখন পুনর্মিলনীর আনন্দ। ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় সেই মা ও মেয়েকে। পরিণত হয় উৎসবে। শুরু হয় সুখ-দুঃখের কথা। মা-মেয়ের সঙ্গে এলাকাবাসীও জড়িয়ে পড়েন এ পুনর্মিলনীর আনন্দে।

চমন আরার নাতনি জামাই আবদুল হাকিম ও জাহিদুর রহমান জানান, শাশুড়ির মা হারানোর গল্প শুনে সেই বিবরণ ও ছোট বেলার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে তারা নানি শাশুড়ির সন্ধান করতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০২২ সালে পাকিস্তানে তাঁর খোঁজ মেলে। ৫৩ বছর পর সম্প্রতি মা-মেয়ের আবেগঘন সাক্ষাৎ হয়।
এ সময় অশ্রু ভেজা কণ্ঠে আনন্দের সঙ্গে মেয়ে উম্মে মুরসেলিনা বলেন, জীবনের বিশেষ মুহূর্তগুলোতে মায়ের কথা মনে পড়ত। ৫৩ বছরের অতিবাহিত মুহূর্তগুলো যতটা কষ্টদায়ক ছিল, মাকে কাছে পেয়ে সেসব কষ্ট ম্লান হয়েছে সীমাহীন আনন্দে। ভেঙে পড়া মুহূর্তে সবার সহযোগিতা পেয়েছেন। তাঁর মেয়ে জামাই জাহিদুর রহমান নিটুলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে মা-মেয়ের এ পুনর্মিলনের ঘটনার সূত্রপাত।

চমন আরার নাতনি জামাই আবদুল হাকিম ও জাহিদুর রহমান নিটুল জানান, শাশুড়ির মা হারানোর গল্প শুনে সেই বিবরণ ও ছোট বেলার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে তারা নানি শাশুড়ি চমন আরাকে সন্ধান করতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০২২ সালে এসে খোঁজ মেলে। ৫৩ বছর পর সম্প্রতি মা-মেয়ের মুখোমুখি আবেগঘন সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে এর আগে ভিডিও কলে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। অশ্রুসিক্ত চোখে মা চমন আরা বলেন, মেয়ে হারানোর বেদনায় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সবসময় কাঁদতেন। ছবি দেখে দেখে অনেকটা নির্ঘুম কেটেছে জীবনের ৫৩ বছর। এখন মেয়ে, জামাই, নাতনি পেয়েছি এতে আমি অনেক খুশি। জীবনের সব দুঃখ-বেদনার অবসান হয়েছে। ছয় মাস বাংলাদেশে থাকার কথা রয়েছে মা চমন আরার। গত ৩ মে রাত ৯টার দিকে একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এর দুই দিন পর ৫ মে দিনাজপুর শহরে নিজের বাসায় মাকে নিয়ে আসেন মেয়ে উম্মে মুরসেলিনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর