শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিথিলাপুরের অদম্য এক কবির

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

মিথিলাপুরের অদম্য এক কবির

ডান হাত অচল। পা তেমন কাজ করে না। পা টেনে হাঁটতে হয় সাবধানে। তার ছোট ছেলেটিরও দুই পা অসাড়। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে নেই হুমায়ুন কবির। সমন্বিত খামার গড়ে বদলেছেন ভাগ্যের চাকা। খামারটির অবস্থান কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামে। তবে ২০১৫ সালের আগে হুমায়ুন কবিরের জীবন এমন ছিল না। পারিবারিক সূত্র জানায়, তারা চার ভাই তিন বোন। হুমায়ুন কবির সবার বড়। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। একটি কলেজে চাকরি করতেন। কিন্তু সপ্তাহে তিন দিনের কাজ তাকে বিরক্ত করে। তিনি আরও বেশি কাজ খুঁজতে থাকেন। যোগ দেন বহুজাতিক কোম্পানিতে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি এগিয়ে যান। একপর্যায়ে বড় অঙ্কের বেতন, গাড়ি, আবাসিক ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধাও পেতেন। কঠোর পরিশ্রম করে কোম্পানির উন্নতিতেও ভূমিকা রাখেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়। ঢাকায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ডান হাত ও পা অকেজো হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কথা। ফিরে আসেন গ্রামের বাড়ি মিথিলাপুরে। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে তার শরীরের কিছুটা উন্নতি হয়। কথাও বলতে শুরু করেন। কাজের মানুষ, তাই বসে থাকতে চাননি। ভাই ও বন্ধুদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। তাকে সহযোগিতা করতে প্রবাস জীবন ফেলে দেশে চলে আসেন তার ছোট ভাই সাইদুল কবির মুন্না। ভারী কাজে মুন্না সহযোগিতা করেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে একটি গরু কেনেন। একটি থেকে বর্তমানে ১১টি গরু। নিজেদের তিনটি পুকুরে মাছ চাষ করেন। চাষ করেন সবজিও। আছে মুরগি ও হাঁস। সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলে আরহাদকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন হুমায়ুন কবির। ঝড়ে বড় পুকুরের পূর্ব পাড়ের সবজির মাচা ভেঙে গেছে। তা মেরামত করছেন মুন্না। পরামর্শ দিচ্ছেন হুমায়ুন কবির। মসজিদের পেছনে রয়েছে আরেকটি সবজির জমি। সেখানে তিনি একাই সবজি গাছগুলো ঠিক করে দিচ্ছেন। এরপর যান লেবু, আম, কলা, কাঁঠালের গাছ পরিদর্শনে। গরুর জন্য বড় জমিতে চাষ করা হয় বিদেশি ঘাস। ঘাস এনে গরুকে দেন। গরুগুলো তাকে দেখে এগিয়ে আসে। তিনিও তাদের গলা, মাথা চুলে আদর করেন। হুমায়ুন কবির হাসিমুখে বলেন, অবসর থাকতে ভালো লাগে না। খামারের কাজ আর বইপড়ায় সময় কাটে। জীবনের যে কোনো পরিস্থিতিতে হাসি মুখে বলছি-আলহাদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার যৌথ পরিবার। পরিবারের সদস্যদের সাহস ও সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে পেরেছি। এমন পরিবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি আরো বলেন, সার, বীজ ও পশু খাদ্যের দাম কমলে আমরা আরো বেশি লাভ করতে পারবো। আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের সংগঠক ও হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সমন্বিত খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। তার মত অন্য শারিরীক প্রতিবন্ধী ও বেকার তরুণরাও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, হুমায়ুন কবির একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। তার খামার পরিদর্শন করেছি। আমরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এমন আরও উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা কাজ করছি।

 

 

সর্বশেষ খবর