শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিরনি মসজিদ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিরনি মসজিদ

গাইনের ডহরা। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি গ্রাম। এ গ্রামে ২০০ বছর আগে গড়ে ওঠে একটি মসজিদ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা জনশ্রুতি। এ মসজিদের মাঠের কোণে রয়েছে সিমেন্টের তৈরি হাউস। এতে একসময় পড়ত মানতের (ইচ্ছা পূরণ) তিন শর বেশি পাতিল শিরনি। সেই শিরনির জন্য লাইন ধরতেন হাজারো মুসল্লি। তাই মসজিদটির নাম হয় শিরনি মসজিদ। প্রাচীন কারুকাজের মসজিদটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচেতনরা।

২০-২২ বছর আগেও মসজিদের হাউসে শিরনি ঢালা হতো। এখনো প্রতি শুক্রবার এখানে কয়েক পাতিল মানতের শিরনি, জিলাপি, মিষ্টি আসে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০-২২ বছর আগেও মসজিদের হাউসে শিরনি ঢালা হতো। এখনো প্রতি শুক্রবার এখানে কয়েক পাতিল মানতের শিরনি আসে। আসে জিলাপি, মিষ্টি। মসজিদে মনের ইচ্ছা পূরণে শিরনি দিতে আসতেন আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ। তার সঙ্গে আসতেন বিভিন্ন জেলার মানুষও। ২০ বছর আগেও জুমার নামাজে অংশ নিতেন বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মুসল্লি। মসজিদের দেখভাল করা পরিবারের সদস্য প্রায় ৭০ বছর বয়সী আবদুল বাতেন বলেন, এক ফকির ২০০ বছর আগে এখানে মাটির ঘর তুলে মসজিদ চালু করেছেন বলে মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি। তিনি শিরনি রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। জনশ্রুতি আছে, এই ফকির শিরনি রান্না করে গরম শিরনি হাত দিয়ে বিতরণ করতেন। একসময় তিনি কোথাও চলে যান। এরপর স্থানীয়রা মসজিদটি দেখভাল করেন। আমার দাদা এবং বাবাও এ মসজিদের সংস্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমান কাঠামোর মসজিদের বয়সও ১৫০ বছরের বেশি হবে। একসময় হাজারো মুসল্লি হতো। মসজিদ, খোলা বারান্দা পেরিয়ে সড়কেও মুসল্লিদের দাঁড়াতে হতো। আশপাশের গ্রামে একাধিক মসজিদ হওয়ায় এখন মুসল্লি কমে গেছে। এখানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট থেকেও মানুষ মানতের শিরনি নিয়ে আসত। মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লাকসাম বাইপাস থেকে চৌদ্দগ্রাম সড়ক। এ সড়কের পাশে গাইনের ডহরা গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। বাইপাস থেকে মসজিদের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। সাদামাটা প্রাচীন একটি মসজিদ। মসজিদের ভিতরে রয়েছে নানা কারুকাজ। বাইরে রয়েছে উঁচু মিনার। ধারণা করা হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো। এখন মিনারের ওপরে মাইক লাগানো হয়েছে। পাশের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শামছুল আলম রাজন বলেন, আমরা সেখানে নামাজ পড়তে যেতাম। আমাদের মতো পাশের দিঘিরপাড়া, ভোজপাড়া, কাদ্রা, নরপাটি, গুনতী, গন্ডামারাসহ বিভিন্ন্ এলাকার মানুষ নামাজ পড়তে আসতেন। আমরা ২০ বছর আগেও হাউসে রাখা শিরনি বিতরণ করতে দেখেছি। মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল হাই বলেন, মসজিদটি ২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বাপ-দাদার মুখে শুনেছি। আমাদের পরিবার মসিজদটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আমরা মসজিদে মুসল্লিদের থেকে কোনো চাঁদা তুলি না। মানুষের দানের টাকায় মসজিদের খরচ ও সংস্কার কাজ করে থাকি। লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। এক দিন মসজিদটি পরিদর্শন করব। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর