শনিবার, ১ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

নদীর চরে হাঁসের খামার

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

নদীর চরে হাঁসের খামার

ছোট যমুনা নদীতে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস। আবার কিছু সময় পর খাবারের পাত্র হাতে যখন আয়, আয়, বলে ডাকছে তখন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে পাড়ে ছুটে আসছে ওইসব হাঁস। এ দৃশ্য দেখতে অনেকে আসছে নদীর চরে হাঁসের খামার দেখতে।

অন্যদিকে তিন বছরেই ক্যাম্বেল জাতের এ হাঁসের খামারই বদলে দিয়েছে জহুরুল ইসলাম ফারুকের জীবন। অর্থনৈতিক সংকটকে পেছনে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় নদীর চরে এ খামার গড়ে সফলতা পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম ফারুক।

এখন এ খামার থেকে তিনি হাঁস এবং ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে আয় করেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। হাঁস দেখাশোনার জন্য দুজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নদীতে থাকা শামুক, মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে এসব হাঁস। এতে হাঁসের ডিমে পুষ্টি গুণাগুণ থাকে ভালো। অন্যদিকে হাঁস পালনে খাবারের খরচ কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন তিনি।

ফারুক বলেন, ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফসল এ খামার। স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খাল-বিলের পাশে খামার গড়ে তোলা যায়। অনেকে হাঁসের রোগবালাই নিয়ে চিন্তিত থাকেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব

প্রায় তিন বছর আগে নেত্রকোনা থেকে ডিমপাড়া ৭০০ হাঁস কিনে খামার শুরু করেন ফারুক। শুরুতেই তার আনুষঙ্গিক ব্যয় হয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পরে কিছু হাঁস বিক্রি করেছেন ৬০০ টাকা পিচ দরে। আবার গত ফেব্রুয়ারিতে বগুড়ার আবু সাঈদ হাঁসের খামার থেকে ৮৫০ হাঁসের বাচ্চা ২৯ টাকা দরে কিনে আনেন। বর্তমানে তার খামারে ১০০০টি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন পাওয়া ডিমগুলো ১৬-১৭ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেন তিনি। নদীর পাড়ে সাময়িক শেড করে তার পাশে অস্থায়ী ঘর করে নিজেই রাতে থাকেন সেখানে। তবে নদীর পানি বাড়লে বাড়ির পাশে বিলের মাঝখানে স্থায়ী শেড নির্মাণ করেন। এখানে ডিম পাড়ে এমন ৮০০ হাঁস রাখা হবে। হাঁসের খামারে সফলতা অর্জনই ভাগ্যকে বদলে দিয়েছে ফারুকের। খরচ কমাতে বাড়ির পাশে বিরামপুরের পলিপ্রয়াগপুর ইউপির জোতজয়রামপুর এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পাড়ে এ অস্থায়ী শেডে হাঁসের খামার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে খামারি জহুরুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘ক্যাম্বেল’ জাতের একটি হাঁস তিন মাস একাধারে ডিম দিয়ে থাকে। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭-২০ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়, তখন ওগুলো বিক্রি করে দেই। ডিমগুলো ১৬-১৭ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়। বর্তমানে হাঁসসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদে গড়ে মাসে ৭০-৮০ হাজার টাকা আয় হয়। নদীর পাড়ে ৮০-৯০ দিনের জন্য সাময়িক শেড করায় নদীতে থাকা শামুক, মাছসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ায় খরচ কম লাগে। নদীতে সারা দিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন তার সম্পর্কে ভাগ্নে ছায়রুদ্দিন। হাঁস শেডে পৌঁছানোর পর পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে জোবায়ের ও ছায়রুদ্দিনের। আর হাঁসের ওষুধ খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখেন ফারুক। এটাই তার নিত্যদিনের কাজ। আর এ কাজে পাশে থেকে সবসময় সহযোগিতা করছে তার স্ত্রী জেবা বেগম।

তিনি বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না, ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এ খামার। স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খালবিলের পাশে খামার গড়ে তোলা যায়। অনেকে হাঁসের রোগ বালাই নিয়ে চিন্তিত থাকেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব।

বিরামপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিরামপুর উপজেলায় খামারির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী, খাল-বিলে ভরা এ উপজেলায় হাঁস পালন ব্যাপক সম্ভাবনাময়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর