শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
বছরে ৪ কোটি টাকার কোয়েল ও ডিম বিক্রি

চাকরি ছেড়ে সফল খামারি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

চাকরি ছেড়ে সফল খামারি
ইতিহাসে মাস্টার্স এ তরুণ ১৪ বছরে ছোট-বড় ৩০টি খামার গড়েছেন। পাখির সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। নিজে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৪০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার কোয়েল পাখি ও ডিম বিক্রি করে তাক লাগিয়েছেন বগুড়ার তরুণ যুবক শাহিদুল ইসলাম শহিদ। ১০০ কোয়েল পাখি থেকে তার খামারে এখন ৭০ হাজার পাখি। সরকারি চাকরি ছেড়ে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। নিজে স্বনির্ভর হয়ে অন্যদের আলোর পথ দেখাচ্ছেন। চেষ্টা থাকলে সফলতা আসবে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গাবতলীর উদ্যোক্তা শহিদ।

জানা যায়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা গ্রামের কৃষক দিরাজ প্রামাণিকের ছেলে শাহিদুল ইসলাম শহিদ। তিনি ২০০৫ সালে এসএসসি পাসের পর উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নের সময় থাকতেন শহরের ছাত্রাবাসে। অর্থাভাবে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনার খরচ চালাতে কষ্টকর হয়ে উঠলে খণ্ডকালীন চাকরি করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এইচএসসি পাসের পর কিছুদিন গার্মেন্টে চাকরি করে আবার ফেরেন সেই খণ্ডকালীন চাকরিতে। কীভাবে জীবন সংসার চলবে সেই চিন্তা যেন পিছু ছাড়ে না। বসতবাড়ির সাড়ে তিন শতাংশ জায়গা ছাড়া সহায়সম্বল বলে কিছুই নেই তাদের। ২০১০ সালের দিকে শহরের সাতমাথায় কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া দেখে খামার গড়ার চিন্তা করেন তিনি। মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ১০০ কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করেন খামার। শুরুতে পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে তাকে তাচ্ছিল্য করত। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে তিনি ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদফতরের কার্য সহকারীর পদে চাকরি পান। চাকরির চেয়ে খামারে বেশি লাভবান হবেন, তাই তিন বছর চাকরি করে ফিরে আসেন খামারে। পাশাপাশি ইতিহাস বিভাগে তিনি মাস্টার্স পাস করেন। ১৪ বছরে তিনি ছোট-বড় ৩০টি খামার গড়েছেন। বর্তমানে পাখির সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি। তিনি স্বনির্ভর হয়েছেন এবং অন্তত ৪০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

একসময় কিছুই ছিল না এ যুবকের। কীভাবে সংসার চলবে এ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন এ খামারি। সেই চিন্তা দূর করেছে কোয়েল পাখি। বছরে পাখি, ডিম আর বাচ্চা বিক্রি করেন প্রায় ৪ কোটি টাকার। শহিদ এখন সফল খামারি।

শাহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, জাপানি জাতের কোয়েল পাখি থেকে তিনি ডিম উৎপাদন করেন। ২ টাকা থেকে ৩ টাকা করে মাসে ৬ লাখ পিস ডিম বিক্রি, নিজস্ব ইনকিউবেটরে প্রতি মাসে দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদন, খাবার উপযোগী পাখি বিক্রি করেন প্রতি মাসে ৪৫ হাজার পিস। ২৫ থেকে ৩০ দিনে ২৪ টাকার খাবার খেয়ে একটি পাখি ২২০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজন হয়। খাবার উপযোগী এসব পাখি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। ৪৫ থেকে ৬০ দিনের একটি পাখি বছরে ৩ শতাধিক ডিম দেয়। ইনকিউবেটরে ১৮ দিনে বাচ্চা ফুটিয়ে তা সাত টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেন তিনি। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই যাচ্ছে বগুড়ার শহিদের কোয়েল পাখি। ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো রোগবালাই নেই কোয়েল পাখির, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তিনি আরও জানান, এখন অনেকেই তার কাছে আসেন পরামর্শ নিতে। দুই বিঘার বেশি জায়গাতে গড়ে তুলেছেন মা কোয়েল অ্যান্ড হ্যাচারি। গ্রামের বেকারদের স্বনির্ভর করতে উদ্যোগ নিয়েছেন, অসহায় নারীরা রয়েছেন সেই তালিকায়। নিজেই খামার গড়েছেন প্রায় ৩০টি। সেখানে চুক্তিভিত্তিক খামার দেখাশোনা করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর