শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইয়াছিনের বিস্ময়কর প্রতিভা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

ইয়াছিনের বিস্ময়কর প্রতিভা

ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়ে সঠিক সময় বলতে পারেন নওগাঁর রানীনগরের রাতোয়াল গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ইয়াছিন আলী। সকাল-দুপুর, বিকাল-সন্ধ্যা কিংবা রাতের যে কোনো সময় তার কাছে সময় জানতে চাইলে বলে দেন সঠিক সময়। তার বলা সময় হুবহু ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে মিলে যায়। তাই তিনি সবার কাছে ‘টাইম ভাই’ নামে পরিচিত। এ বয়সে তিনি সাইকেল চালিয়ে সবজির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া তার নামে একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। যেটি ‘ইয়াছিনপুর’ নামে পরিচিত। ইয়াছিন আলী পড়ালেখা না জেনেও প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াই সঠিক সময় বলে দেন। রাস্তাঘাটে কেউ তাকে কটা বাজে জিজ্ঞাসা করলে ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়ে সঠিক সময় বলে দিতে পারেন। তার এ বিরল প্রতিভা দেখে স্থানীয়রা রীতিমতো বিস্মিত। তাকে নিয়ে গর্বও করেন স্থানীয়রা।

ইয়াছিন আলী বলেন, পাকিস্তান আমলে মাত্র ১১ টাকা দিয়ে সবজির ব্যবসা করার সময় থেকে তিনি ঘড়ি ব্যবহার করতেন। সে সময় তিনি হঠাৎ করে সান্তাহার রেলস্টেশনে এক সুইপারের হাতে ঘড়ি দেখে অবাক হন। এরপর ক্ষোভে আর কোনোদিন ঘড়ি ব্যবহার করবেন না বলে পণ করেন।

ঘড়ি ছাড়াই হাতের দিকে তাকিয়ে বলে দেন সঠিক সময়। ৭৫ বছর বয়সেও ইয়াছিন আলী সাইকেল চালিয়ে সবজির ব্যবসা করে জীবিকানির্বাহ করেন। ঘড়ি ছাড়া সময় বলতে পারায় তার নামে একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। যেটি ‘ইয়াছিনপুর’ নামে পরিচিত। ইয়াছিন আলী পড়ালেখা না জেনেও প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াই সঠিক সময় বলে দেন; যা রীতিমতো বিস্মিত করে সবাইকে
হাতে থাকা ঘড়ি ছুড়ে ফেলে প্রতিজ্ঞা করেন নিজের মনের দেয়াল বানাবেন তিনি। যেই প্রতিজ্ঞা সেই কাজ। তখন থেকে চলার পথে বা যে কোনো সময় চোখ বন্ধ করে করে ঘড়ি না দেখে সময় আয়ত্ত করার চেষ্টা শুরু করেন। এরই এক পর্যায়ে আস্তে আস্তে তিনি ঘড়ি না দেখে হাতের দিকে তাকিয়ে সময় বলে দেওয়া শুরু করলেন। প্রথমে ঘণ্টা; এরপর মিনিট আর শেষে সেকেন্ড। প্রচার হয়ে গেল ইয়াছিন ঘড়ি না দেখে সময় বলতে পারেন। এভাবে ২৪-২৫ বছর ধরে ঘড়ি না দেখে সময় বলে আসছেন ইয়াছিন। তিনি আরও বলেন, এখনো যে কোনো সময় কাজে রাস্তাঘাটে বের হলে লোকজন তাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞাসা করেন কয়টা বাজে। তখন সময় বলে দিলে তারা মোবাইলের সঙ্গে সময় দেখে মিলে গেলে খুব আনন্দ পায়। সঠিক সময় বলতে পারায় তারও খুব ভালো লাগে। তার পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। এক ছেলে মারা গেছে। সবার বিয়ে দিয়েছেন। ছোট সবজির ব্যবসা করে অভাব সব সময় লেগেই আছে। তবে সরকারের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি তার মধ্যে কী এমন আধ্যাত্মিকতা রয়েছে, যখনই তাকে কেউ কটা বাজে জিজ্ঞাসা করেন তিনি সঠিক সময় বলে দেন। অথচ তিনি কোনো লেখাপড়া জানেন না। কিন্তু তার সময় সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে। এটা খুবই ভালো লাগার বিষয়। দেখা হলে কটা বাজে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সঠিক সময় বলে দেন। পরে ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তার বলার সময়ের সঙ্গে তা মিলে যায়। তার এ প্রতিভা আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। যা বিস্ময়কর। এটি কখনো কল্পনা করা যায় না। লেখাপড়া জানেন না, সাধারণ একজন মানুষ, তার মধ্যে এমন প্রতিভা আছে যেটা আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয়।

সর্বশেষ খবর